প্রাক্তন তৃণমূল, অধুনা বিজেপি নেতা ১৮০ কোটি কালো টাকা সাদা করিয়েছেন! CBI তদন্ত চেয়ে শাহকে চিঠি কুণাল ঘোষের
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবার মুখোমুখি কেন্দ্রীয় সরকারের দুই সংস্থা সিবিআই ও আয়কর দফতর।
২০১৪ সালে আয়কর দফতরের প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে কালোটাকা সাদা করিয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল, বর্তমানে বিজেপির এক নেতা। কুণাল ঘোষের অভিযোগ সেই টাকার উৎস জানা প্রয়োজন। কারণ ওই নেতা বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার অর্থ নয়ছয়ের মামলায় অভিযুক্ত।
২০১৪ সালে আয়কর প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে ১৮০ কোটি টাকা সাদা করিয়েছেন তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা! ২০১৬ সালে এমনই অভিযোগ নিয়ে সিবিআইকে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। অর্থলগ্নি সংস্থা কেলেঙ্কারির মামলায় যখন বাংলার বহু প্রভাবশালী নেতার বিপুল অর্থের উৎসের খোঁজ চলছে, তখন ওই নেতার বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এরপর কেটে গিয়েছে ছয় বছর। সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা অধুনা বিজেপি নেতার বিপুল অর্থের উৎস জানতে ফের প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আর্জি জানালেন কুণাল ঘোষ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কুণালবাবুর পাঠানো চিঠিকে গুরুত্ব দিয়ে সিবিআইকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে অমিত শাহের মন্ত্রক। এই ব্যাপারে আবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনস্থ ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি) কে চিঠি দিয়েছে সিবিআই।
কী অভিযোগ কুণাল ঘোষের?
২০১৪ সালে কালো এবং হিসাব-বহির্ভূত টাকা সাদা করার জন্য আয়কর দফতর একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করে। তাতে বলা হয়, হিসাব-বহির্ভূত টাকা আয়কর দফতরের কাছে জমা দিলে তার ৪০ শতাংশ কেটে নিয়ে বাকিটা সাদা করে দেওয়া হবে। তাতে এও বলা হয়, এতে ওই ব্যক্তির পরিচয় গোপন থাকবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে না। এর ফলে বহু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি কালো টাকা সাদা করিয়ে নেন। প্রকল্পের সাফল্যের কথা তুলে ধরে আয়কর দফতর কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে। সেখানেই বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের একটি রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা ওই প্রকল্পে ১৮০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। তবে পূর্বঘোষণা মাফিক ওই নেতার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি আয়কর দফতর।
একসময়ে তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতা ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। কুণালবাবুর দাবি, ওই নেতা তৃণমূলে থাকাকালীনই সিবিআইকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। একজন জনপ্রতিনিধির কাছে কীভাবে এত টাকা আসবে সেই প্রশ্ন রেখেছিলেন। সূত্রের খবর, এরপর ২০১৮ সালে ওই নেতার জমা দেওয়া বিপুল অর্থ লেনদেন সম্পর্কে আয়করের কাছে সবিস্তার তথ্য চায় সিবিআই। কিন্তু আয়কর দফতরের প্রতিশ্রুতি ছিল কালো টাকা যাঁরা সাদা করবেন তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। সিবিআইয়ের পাল্টা যুক্তি, সারদার মতো ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেআইনিভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তোলা টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে তাঁরা সেই টাকা আয়কর প্রকল্পের সুযোগে সাদা করিয়ে নিলে তাঁদের অপরাধ কি চাপা পড়ে যাবে?
এ ব্যাপারে কুণাল ঘোষ নিজেও তাঁর আবেদনে দাবি করেছেন, ওই নেতার বিপুল অঙ্কের টাকার সঙ্গে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার যোগ থাকতে পারে।
আয়কর দফতরের ঘোষিত প্রকল্প শুরু থেকেই জানিয়েছিল নাম, ঠিকানা গোপন রাখা হবে। কিন্তু এখন অভিযোগ উঠছে সেই টাকা আসলে অর্থলগ্নি সংস্থায় সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ, যা ওই নেতা আত্মসাৎ করেছেন। সেই তথ্য চাইছে সিবিআই। কী করবে আয়কর দফতর, এখন এটাই বড়ো প্রশ্ন।
Comments are closed.