সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে আদিবাসী ও অরণ্যবাসীদের হয়ে দেশজুড়ে পথে বামেরা, পাট্টার আবেদন খতিয়ে দেখার দাবি

অরণ্য এবং অরণ্য সংলগ্ন এলাকায় আদিবাসী এবং অরণ্যবাসীদের বাসস্থানের অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির আগে দেশজুড়ে আদিবাসী এবং অরণ্যবাসীদের হয়ে পথে নামলেন বামপন্থী, সমাজকর্মী ও পরিবেশপ্রেমীরা। দিল্লিতে কৃষক সভার উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আওয়াজ ওঠে, মানবিকতার স্বার্থে ফের খতিয়ে দেখা হোক সমস্ত পাট্টার আবেদন। আগামী বুধবার, ২৪ শে জুলাই সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি।
খুঁজে দেখা হোক কেন বাতিল হয়েছে লক্ষ লক্ষ আবেদন, পাশাপাশি বনাঞ্চল অধিকার আইনের সঠিক প্রয়োগের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছে কৃষক সভা। তাতে যোগ দিয়েছেন একাধিক মানবাধিকার, সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশবিদদের একাংশ। রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় স্তরের বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আইনের বাস্তব প্রয়োগ না হওয়ায় আদিবাসীরা জমি পাচ্ছেন না। উল্টে যুগ যুগ ধরে অরণ্য এলাকায় বসবাস করা লক্ষ লক্ষ আদিবাসী এবং অরণ্যবাসীদের পাট্টা খারিজ হচ্ছে।
রাজধানীর যন্তরমন্তরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা অভিযোগ করেন, আদিবাসী সহ অরণ্যবাসীদের বাস্তুচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য দেশের অরণ্যভূমিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়া, বলেও দাবি করেন হান্নান মোল্লা। যন্তর মন্তরের প্রতিবাদ সভা থেকে ভারতীয় বন আইন সংস্কারে কেন্দ্রের অতি তৎপরতারও তীব্র সমালোচনা করা হয়।
২০০৬ সালে আইন এনে বনবাসীদের অরণ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করে মনমোহন সিংহের সরকার। এই আইন অনুযায়ী, বনবাসীদের যে যেখানে বাস করছেন, তাঁকে সেই জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু অরণ্যের অধিকার আইন প্রণয়নের পরেই একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, বিভিন্ন সময় আদালতের দ্বারস্থ হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি এই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৬ টি রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ফলে ১০ লক্ষের বেশি আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসী পরিবারের উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দেশজুড়ে এই রায়ের প্রতিবাদে পথে নামেন পরিবেশকর্মীরা। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে মোদী সরকার এই মামলায় চুপ থাকার নীতি নিয়েছে। পরবর্তীতে অবশ্য নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র। রায়ের বিরুদ্ধে ফের আদালতে যায় তারা। শেষপর্যন্ত রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেই মামলারই শুনানি বুধবার।
এই মামলার শুনানির আগেই এবার পথে নেমে আদিবাসী এবং অরণ্যবাসীদের অধিকারের পক্ষে লড়াই শুরু করলেন পরিবেশবিদ থেকে সমাজকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। বাংলা ছাড়াও উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, কেরল এবং দিল্লিতে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আদিবাসী ও অরণ্যবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান বামপন্থী নেতৃত্ব।

Comments are closed.