বাম নেতাকে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরছেন গেরুয়া শঙ্কর! ভোট মিটলেও এখনও শিরোনামে শিলিগুড়ি
শিলিগুড়ি শহরে বান্টির পরিচয় দাপুটে বাম যুব নেতা হিসেবে
ভোট মিটে গেছে। শিলিগুড়ির বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাচ্ছেন উত্তরের পাহাড়ে। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। গোল বাঁধল যখন গেরুয়া শঙ্করের ঘোরার ছবি আপলোড হল বান্টি দত্তের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে!
এখন প্রশ্ন হল, কে বান্টি দত্ত?
শিলিগুড়ি শহরে বান্টির পরিচয় দাপুটে বাম যুব নেতা হিসেবে। সিপিএমে থাকাকালীন শঙ্কর ঘোষের অন্যতম কাছের নেতা। ভোট মেটার পর সেই বান্টি দত্তকে নিয়ে সপরিবার পাহাড়ে ঘুরছেন শঙ্কর ঘোষ। আর বান্টির ফেসবুক ওয়ালে সেই ছবি একইসঙ্গে জন্ম দিয়েছে হাজারো প্রশ্নের।
যদিও শঙ্করের সঙ্গে ছবিগুলি ফেসবুকে পোস্ট করে বান্টি ক্যাপশনে লেখেন, রাজনীতি থাক রাজনীতির জায়গায়, ভালোবাসার সম্পর্কগুলো থাকে ভালোবাসার জায়গায়।
ভোটের মুখে শিলিগুড়ির বাম ছাত্র রাজনীতির পরিচিত মুখ শঙ্কর ঘোষ যোগ দেন বিজেপিতে। নতুন দলে গিয়ে একুশের বিধানসভা ভোটের টিকিটও জোটে। বিপরীতে সিপিএম প্রার্থী তাঁর এক সময়ের রাজনৈতিক গুরু অশোক ভট্টাচার্য। সিপিএমের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছেদ করে শঙ্করের এই শিবির বদল শিলিগুড়িতে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দিয়েছিল।
আবার বান্টির ফেসবুক ওয়ালে নজর দিলে দেখা যাবে, সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের সমর্থনে একাধিক পোস্ট। পাশাপাশি রয়েছে বিজেপি, নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করে একাধিক কার্টুন, বিজেপির সমালোচনায় ঝাঁঝালো পোস্ট। ভোট দিয়েও ফেসবুকে লিখেছেন, তাঁর ভোট সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে।
অন্যদিকে বন্ধু শঙ্কর গলায় গেরুয়া গামছা দিয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়ে চষে ফেলেছেন গোটা শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র।
রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দুই বন্ধুর একসঙ্গে ছুটি কাটানোর ছবি নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। রাজনৈতিক হানাহানির বাংলার তাঁদের এই ছবি যে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে তা পোস্টের কমেন্ট বক্স দেখলেই বোঝা যায়।
আর এখানেই উঠছে সেই অমোঘ প্রশ্ন, বান্টি দত্ত গেরুয়া শিবিরে যাচ্ছেন নাকি শঙ্কর ফিরছেন লালে?
একপক্ষের মতে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে। শঙ্করের মত নেতা শুধু নির্ভেজাল সময় কাটাতে বামপন্থী বন্ধুকে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরছেন, বিষয়টা এতটা সরল নয়। তাঁদের দাবি শঙ্কর বন্ধুকে তাঁর নতুন দলে টানতে চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। এই ধারণার ভিত্তি হিসেবে তাঁরা আর একটি পুরোনো ছবির কথা বলছেন। তখনও শঙ্কর সিপিএমে রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ছড়িয়ে পড়তে তীব্র শোরগোল শুরু হয়েছিল। দু’পক্ষই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে বিষয়টিকে লঘু করলেও জল্পনা যে সত্যি তার প্রমাণ মিলেছিল কয়েক দিন পরেই।
আবার অন্য একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, লাল শঙ্কর গেরুয়া হয়েছেন ঠিকই কিন্তু ভোটের ফল তাঁর সঙ্গ দেবে এমন দাবি অতি বড় বিজেপি ভক্তও করবেন না। সুতরাং শঙ্করের ভুল স্বীকার করে অশোক ভট্টাচার্যের দলে ফেরার একটা প্রক্রিয়া আবার শুরুর ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাঁরা।
দুই বন্ধুরই ফোন আপাতত পরিষেবা সীমার বাইরে। তবে কারণ যাই হোক, গেরুয়া শঙ্করের সঙ্গে লাল বান্টির হাসিখুশি ছবি, হানাহানির বঙ্গ ভোটের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।
Comments are closed.