বামপন্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলনের জেরে পিছু হঠল ফরাসি সরকার, বেতন বৃদ্ধি ও কর হ্রাসের ঘোষণা করলেন মাঁকর

পেট্রোপণ্য এবং সাধারণ জিনিসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ফ্রান্সে বামপন্থীদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্ট, যা শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। লাগাতার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে প্যারিসসহ ফ্রান্স। আন্দোলনের তীব্রতায় স্তব্ধ হয়ে যায় ফ্রান্সের জনজীবন। শেষমেশ চাপে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হল ইমানুয়েল মাঁকরের নেতৃত্বাধীন ফরাসি সরকার।
মূল্যবৃদ্ধি ও বিপুল করের বিরোধিতায় নজিরবিহীন গণ-বিক্ষোভের মুখে পড়ে অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করলেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি মাঁকর। দেশজোড়া প্রতিবাদের মুখে নিজের অনড় অবস্থান থেকে পিছু হঠে ফরাসি রাষ্ট্রপতি সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে টিভিতে এক ভাষণ দেন। টেলিভিষণ ভাষণে মাঁকর বলেন, দেশের এই বিক্ষোভের পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না, তাঁর কথা কারো মনে আঘাত করে থাকলে তিনি দুঃখিত।
১৩ মিনিটের এই টেলিভিষণ ভাষণে মাঁকর সোমবার আরও বলেন, আমার ব্যবহারেই হয়তো এরকম একটা বার্তা প্রকাশ পেয়েছে যে, আমি এই সমস্যা নিয়ে চিন্তিত নই বা এটা আমার অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।

এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে কিছু ক্ষেত্রে কর কমানো হবে, সামাজিক উন্নয়ন খাতে যে কর নেওয়া হোত তাও কমবে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এবার থেকে সরকারি কর্মীদের নূন্যতম বেতন মাসে ১০০ ইউরো করে বাড়ানো হবে। আগে নূন্যতম বেতন ছিল ১৪৯৮ ইউরো, যা ২০১৮ তে করের চাপে নেমে এসেছে ১১৮৫ ইউরোতে। পাশাপাশি বেতনভোগীদেরও কিছুটা সুরাহা দিতে চাইছে ফরাসি সরকার। ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মাসে যাঁরা ২ হাজার ইউরো পর্যন্ত পেনশন পান তাঁদের ট্যাক্স প্রদানের হার কমবে। বিভিন্ন সংস্থাকে কর্মীদের বছর শেষে বিশেষ বোনাস দেওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি। তবে বিক্ষোভকারীদের চাপে অনেকটাই পিছু হঠেও মাঁকর এদিন জানিয়েছে, পুরোপুরি পিছু হঠছে না সরকার। জারি থাকবে আর্থিক সংস্কারের পদক্ষেপ।
তবে এতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কীনা সন্দেহ আছে। কারণ, ইতিমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা মাঁকরের পদত্যাগ চান। তাঁদের দাবি, ৬ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি চান তারা, তাই ১০০ ইউরোয় কাজ হবে না। উল্লেখ্য, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত প্রায় এক মাস ধরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলছে ফ্রান্সে। যা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে নজিরবিহীন। গত সপ্তাহে বিক্ষোভ প্রায় হিংসার আকার নেয়। পোশাকি নাম ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্টে বাম ও ডানপন্থী এবং সরকার বিরোধী একাধিক দল সামিল হয়েছে। গত সপ্তাহে এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেন্ট্রাল প্যারিসে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আর্জেন্টিনায় জি ২০ সম্মেলনের মাঝপথেই দেশে ফিরতে হয়েছিল ইমানুয়েল মাঁকরকে।

Comments are closed.