মাস কয়েক আগে অন্ধ্র প্রদেশের অনন্তপুর জেলায় খিদের জালায় মাটি খেয়ে একই পরিবারের ২ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা প্রবল আলোড়ন ফেলেছিল দেশজুড়ে। ঝাড়খণ্ডে নিয়মিত রেশন না মেলায় অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর দেশের শিশুদের সার্বিক শারীরিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ছবি উঠে এসেছে বারবারই। এই অবস্থায় ফের সামনে এল দেশের শিশুদের অপুষ্টির এক ভয়াবহ ছবি।
ল্যান্সেটের রিপোর্ট বলছে, ভারতের ৫ বছরের নীচে শিশুর অকালমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল অপুষ্টি। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ শিশু জন্ম হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম ওজন নিয়ে। মাতৃত্বকালীন অপুষ্টির কারণে খর্বকায়তা, অ্যানিমিয়া অসুখে ভোগে লক্ষ লক্ষ শিশু। কম-বেশি সব রাজ্যেই শিশু স্বাস্থের হাল প্রায় একই বলে ল্যান্সেটের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রকাশ।
১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের অপুষ্টি সংক্রান্ত নানা সরকারি রিপোর্ট থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও গবেষকের সহযোগিতায় এই রিপোর্ট তৈরি করেছে ল্যান্সেট। রিপোর্টে প্রকাশ, অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুর ৬৮ শতাংশেরই অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কা থেকে যায়। আর শিশুদের অকালমৃত্যুর এটাই অন্যতম কারণ। ল্যান্সেটের রিপোর্ট বলছে শিশুদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা অনেক বেশি, প্রায় ৬০ শতাংশ। আর যুবতী মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার লক্ষণ প্রায় ৫৪ শতাংশ। ভারতে ২১ শতাংশ শিশুর কম ওজন নিয়ে জন্ম হয়। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৭ সালে প্রতি বছর মাত্র ১.১ শতাংশ হারে এই সমস্যা কমেছে। ৩৯ শতাংশ শিশুর মধ্যে খর্বকায়তা লক্ষ্য করা যায়। ভারতে ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম।
গত বুধবার দিল্লিতে এই রিপোর্ট পেশের সময় আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব বলেন, কয়েক দশক ধরে ভারত অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই করছে। সেই ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ থেকে অপুষ্টিজনিত সমস্যার শুরু। যে দেশকে আগে বিভিন্ন শস্য আমদানি করতে হত, এখন সেই দেশে বাইরের দেশে শস্য রফতানি করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই দেশেই অপুষ্টির কারণে শিশু মৃত্যুর ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশি। রিপোর্টে প্রকাশ, মাতৃত্বকালীন অপুষ্টি, মায়ের অ্যানিমিয়া, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ইত্যাদি ভারতের অপুষ্টিজনিত সমস্যার বোঝা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শিশুদের খর্বকায়তা সহ অপুষ্টিজনিত নানা অসুখের সৃষ্টি করে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হয়। ফলস্বরূপ শিশু মৃত্যুর সংখ্যা এ দেশে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশি।
কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ কতটা কার্যকরী হয়েছে? রিপোর্ট বলছে, অনেক রাজ্যই তাদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা রোধে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি। যদিও নীতি আয়োগের সদস্য তথা এআইআইএমএসের প্রাক্তন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বিনোদ পলের কথায়, ২০২২ সালের মধ্যে শিশু অপুষ্টিজনিত সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারতের মতো প্রকল্পের ফলে খর্বকায়তা, ডায়েরিয়ার মতো অসুখ অনেকটাই কমানো গিয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞের কথায়, মানুষের জন্মের ২ বছরের মধ্যে মস্তিষ্কের ৮৫ শতাংশের বিকাশ ঘটে। শরীরের যাবতীয় ক্ষতি বা বিকাশ এই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। তাই এই সময়ে শিশু পুষ্টিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
Comments are closed.