টুকটুক করে কাজ করলে চলবে না, দ্রুত কাজ চাই, বসিরহাটে বৈঠকে বললেন মমতা

টুকটুক করে কাজ করলে চলবে না, অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে, এখনও বহু এলাকা ও চাষের জমি জলে ডুবে রয়েছে। তাই টুকটুক করে নয় দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। বুধবার বুলবুল কবলিত বসিরহাটে প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি অফিসারদের এমনই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এদিনও তিনি আকাশপথে বসিরহাটের বেশ কিছু প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সব স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ছাড়াও ছিলেন জেলাশাসক, বিভিন্ন দফতরের সচিব, খাদ্যমন্ত্রী প্রমুখ। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এই বুলবুল ঝড়ে দুই ২৪ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, এখনও বহু এলাকায় পানীয় জল মিলছে না, অনেক জায়গায় বিদ্যুৎনেই, অনেক মানুষ আবার শেল্টার ছেড়ে নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে চাইছেন। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ আলগা হয়ে গিয়েছে, কাজেই সব মানুষকে এখনই ঘরে ফিরে যেতে দেওয়া চলবে না। বাঁধ ভেঙে গেলে আবার প্লাবন হতে পারে। বাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের আরও কিছু দিন শেল্টারে রেখে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর অফিসারদের দুর্গত মানুষরা যাতে ত্রাণ সামগ্রী, শুকনো খাবার, পানীয় জল, ইত্যাদি পান, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। তাঁর মতে, বাড়ির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বলে কিছু হয় না। ক্ষতি ক্ষতিই। সেভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির হিসেব করতে হবে। তাঁর আরও পরামর্শ, এটা ওর ঘর, এটা তার ঘর, এসব দেখার দরকার নেই, সবাই যেন ত্রাণ পায়। পাশাপাশি, সরকারি অফিসারদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর চেতাবনি, ত্রাণের কাজে সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ডাকার দরকার নেই। ওরা এসে সরকারের বদনাম করে দেবে। লায়নস ক্লাবের মতো সংস্থাগুলিকে ত্রাণের কাজে যুক্ত করুন। টাস্ক ফোর্সকে দ্রুত রিভিউ করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে তিনি বলেন, এবার ঘূর্ণিঝড়ে ম্যানগ্রোভই সুন্দরবনকে বাঁচিয়েছে। এর থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আরও ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে এবং সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হরে হবে। আমি শুনলাম, বন দফতর সুন্দরবনের অনেক মানুষকে জঙ্গলে নিজেদের বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না। এতে ওদের সমস্যা হচ্ছে। বন দফতর যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রদীপদা, আপনি গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করুন, ফসলের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব দেখুন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মমতা এইসময় দুর্গতদের পাশে থাকার নির্দেশ দেন। প্রশাসনিক বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক ঝড়ে তিন জেলায় মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনাতে ৫ জন মারা গিয়েছে। এদিন তিনি ৫ মৃতের পরিবারের হাতে মাথাপিছু ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
এদিকে ঝঞ্ঝাবিদ্ধস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা-কাকদ্বীপে গিয়ে এদিন স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর গাড়ি ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও ওঠে। বাবুলের অভিযোগ, স্থানীয় মানুষ নয়, তৃণমূলই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেনস্থা করার জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Comments are closed.