নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বড় পদযাত্রা এবং জনসভার পর এবার একেবারে বুথ স্তরে আন্দোলনকে নিয়ে যেতে চান তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। এনপিআর, এনআরসি এবং সিএএ কেন বিপজ্জনক, তা মানুষকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানোর জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। শুক্রবার দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এর উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এর পাশাপাশি তিনি জেলার নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে কলকাতা, হাওড়া কর্পোরেশন-সহ প্রায় ১১০ টি পুরসভার ভোট হতে পারে। তার জন্যও এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নেত্রী আরও একবার দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কাউন্সিলর পদের টিকিটের জন্য কোনও তদবির করে লাভ হবে না। জেলার নেতাদের স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কর্মীদের নাম বাছতে হবে। এর আগে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি, সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর পুরভোট নিয়ে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে দুজনেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কাউন্সিলর টিকিটের জন্য কোনও লবিবাজিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। টিকিটের জন্য দাদা বা দিদি ধরেও লাভ হবে না।
শুক্রবারের বৈঠকে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বেশ কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেন মমতা। ঠিক হয়েছে, ১ এবং ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সমস্ত ব্লকে নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি ও এনপিআরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে। ৫ তারিখে হবে মানববন্ধন। ৬ তারিখে মৌনী মিছিল, ৭ তারিখে সব বিধানসভা কেন্দ্রে পথসভা করতে হবে। এর পর ৮ এবং ১০ তারিখে দলের জনপ্রতিনিধিরা তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্তদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। এ ছাড়া ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে এবং ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজির প্রয়াণ দিবসেও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে। নেত্রী মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ, রানাঘাটে একাধিক জনসভা করবেন। বৈঠকে নেত্রী জানান, প্রথম দফার আন্দোলন মোটামুটি শেষ। দ্বিতীয় দফার আন্দোলনে তিনি নিচুতলায় প্রচারের উপর বেশি জোর দিতে চান। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যেমন প্রচার চলবে, তেমনি পুরভোটের প্রচারও চালিয়ে যেতে হবে বলে নেত্রীর নির্দেশ। দলীয় সুত্রের খবর, শুক্রবারের বৈঠকে মমতা বলেন, নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সবার আগে আমি পথে নেমেছি। আমার আর কাউকে দরকার নেই। আমি একাই এই লড়াই চালিয়ে যাব। কংগ্রেস আর সিপিএম আন্দোলনের নামে নাটক আর গুন্ডামি করছে। মানুষ সব দেখছে। কোন জেলার সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, তারও পর্যালোচনা হয়। মমতার দাবি, লোকসভা ভোটের পর সংগঠনের হাল অনেকটাই ফিরেছে। তবে উত্তরবঙ্গে এখনও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে গোষ্ঠীবাজি এখনও অব্যাহত থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিবদমান নেতাদের সতর্ক করে দেন।
Comments are closed.