জিএসটি-জয়েন্ট ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর, চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে, ‘এত জেদ, অহংকার কেন কেন্দ্রের?’
রাজ্যগুলির বকেয়া জিএসটি না দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতার শামিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর ভিত্তি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, রাজ্যের বকেয়া জিএসটি চেয়ে বুধবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দীর্ঘ চিঠি লেখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তারপর এদিন বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকেও বকেয়া জিএসটি নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, এত অহংকার, জেদ কীসের? কেন ভাবলেন না ছাত্রছাত্রীদের কথা? মমতা ব্যানার্জির জানান, কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে সুরক্ষাবিধি রাখা সত্ত্বেও মাত্র ২৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী জয়েন্ট পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, অন্য রাজ্যগুলিতেও পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক কেন্দ্র। মমতার কটাক্ষ, কেন এত অহংকার আর জেদ কেন্দ্রের?
এদিন সকালে জিএসটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, জিএসটি জটিলতা নিয়ে আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন। রাজ্যগুলির ভারত সরকারের প্রতি আস্থা ও নৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর ভিত্তি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মৌলিক ভিত্তির প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। জিএসটি ব্যবস্থার সূচনায় ভ্যাট চালু থাকাকালীন রাজ্যগুলি নিজের কর আদায়ের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে চিঠিতে মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তিনিও জিএসটি চালুর বিরোধিতা করেছিলেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা প্রয়াত বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জানিয়েছিলেন, বিজেপির জিএসটি বিরোধিতার মূল কারণ ছিল তখনকার কেন্দ্র সরকারের প্রতি অবিশ্বাস। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল বিজেপির। তিনি লিখেছেন, রাজ্যগুলিকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করা উচিত।
পাশাপাশি, দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কে বেণুগোপালের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এই চিঠিতে লিখেছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন রাজ্যকে সব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজেই জানাচ্ছেন, সেটা এখন সম্ভব নয়। এদিকে রাজ্যগুলিকে ঋণ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এভাবে কোনও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক চলতে পারে না। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া জয়েন্ট ও নিট পরীক্ষা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, পরীক্ষার্থীরা একবারও বলেনি যে তাঁরা পরীক্ষা দিতে চান না। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে কেরিয়ারের জন্য যদি জীবনই শেষ হয় যায় তবে কার ক্ষতি? তাই কেন্দ্রকে পরীক্ষা মুলতুবি রাখার আবেদন করেছিলাম। তিনি প্রশ্ন ছোঁড়েন, কেন এত অহংকার আর জেদ কেন্দ্রের? জয়েন্ট ও নিট পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ফের একবার কেন্দ্রকে চিন্তাভাবনা করার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
Comments are closed.