মণীশ শুক্লাকে খুনের সুপারি দিয়েছিল কে? কত টাকায়? এই প্রশ্নেই তোলপাড় বারাকপুর, কী মিলল সিআইডি তদন্তে

বারাকপুরের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে হত্যার পরিকল্পনা ছকে ফেলা হয়েছিল তিন মাস আগেই। অপারেশন নিখুঁত করতে বারকয়েক এলাকার রেইকিও করে ফেলছিল শুটাররা। অনেক আগে থেকেই গোপনে ‘টার্গেট’ এর উপর চলছিল নজরদারি। শুধু অপেক্ষা ছিল সঠিক জায়গা ও সময়ের। সেটাই মিলে যায় রবিবার।
অপারেশন এতটাই নিখুঁত ছকা হয়েছিল যে, গুলি চালিয়ে মোটরবাইকে করে কোনওরকম বাধা ছাড়াই চম্পট দিতে পেরেছিল শার্প শুটাররা। শুধু তাই নয়, বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, খুনিকে ‘সুপারি’ দিয়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে থাকা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এমনকী খুনিকে সেই টাকা পেমেন্টও করে তারাই। সেই প্রভাবশালী কারা সে ব্যাপারেই এখন তদন্ত চালাচ্ছে সিআইডি।
বুধবার সকালে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। খড়দহ পুরসভার বাইরে লাগানো সিসিটিভি’র ফুটেজ নেন তাঁরা। তদন্তে নেমে অফিসাররা জেনেছেন, মণীশকে অনেকদিন ধরেই খুনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। তাঁকে খুন করার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে ২৩ লক্ষ টাকা নিয়েছিল এক সুপারি কিলার। সেই দুষ্কৃতী বারাকপুরেরই বাসিন্দা। একবার মণীশকে কাছে পেয়েও শিকার হাতছাড়া হয় তার। তখন সুপারির টাকা কে জুগিয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। এবারও কি সেই একই ব্যক্তি টাকার জোগান দিয়েছে? সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ভিন রাজ্যের সুপারি কিলারের সঙ্গে ৪০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। তার পুরো টাকাই পেমেন্ট হয়ে গিয়েছে। বারাকপুর এলাকার এক যুবক সেই টাকা দিয়ে আসে। তদন্তে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম উঠে আসছে। তাঁরাই নাকি ঠিক করেছিলেন, কীভাবে টাকা দেওয়া হবে এবং কে কত টাকা দেবেন।
জানা গিয়েছে, নাসির নামে যে শার্প শুটার মণীশ শুক্লাকে গুলি করেছে, সে কয়েক বছর আগেও এই নেতার এক অনুগামীকে গুলি করে খুনের জন্য মোটা টাকা নিয়েছিল। বিষয়টি মণীশ জেনে যাওয়ায় নাসির ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চায় তাঁর কাছে। সে যে আর কোনওদিন সুপারি নিয়ে কাউকে খুন করবে না, সেই প্রতিশ্রুতিও দেয়।
এদিকে বুধবার বারাকপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পঞ্চাননতলা রোডে একটি নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই ফ্ল্যাটে গত দু’-আড়াই সপ্তাহ ধরে ডেরা বেঁধেছিল আততায়ীরা। এখানে থেকেই মণীশ শুক্লার উপর নজরদারি চালাত তারা। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। এখন ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে, কার কথায় ওই ফ্ল্যাটে খুনিদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল? কে চূড়ান্ত ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেয়? কোন রুটে চম্পট দেয় আততায়ীরা? এমনই একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। ওই আবাসনের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। স্থানীয়দের থেকেও তথ্য জোগাড় করছেন গোয়েন্দারা।
কারণ মণীশ হত্যাকাণ্ডে যে রহস্য দানা বেঁধেছে, তার শিকড় অনেক গভীরে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

Comments are closed.