ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে তাঁর নাম। তাঁর মাথার দাম দেড় কোটি টাকা। নাম, মুপাল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি। ৭০ বছর বয়সী সিপিআই মাওবাদীর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন বলে দাবি করল তেলেঙ্গানা পুলিশ।
সেন্ট্রাল আইবি এবং ছত্তিসগঢ় সিআরপিএফের এক বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় দশক ধরে মাওবাদীদের নেতৃত্ব দেওয়া গণপতি হাঁপানি, ডায়াবেটিস এবং হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। সূত্রের খবর, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলেঙ্গানা রাষ্টীয় সমিতির প্রধান চন্দ্রশেখর রাওয়ের ঘনিষ্ঠ নেতাদের মাধ্যমে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা জানিয়েছেন গণপতি। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এই আত্মসমর্পণের ব্যাপারটা চূড়ান্ত হবে বলে খবর। ছত্তিসগঢ়ে কর্মরত এক সিনিয়র পুলিশ অফিসারও সংবাদমাধ্যমকে এই আত্মসমর্পণের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল করেছেন। তাঁর কথায়, আত্মসমর্পণের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত তথ্য দিতে পারব না। তবে কিছু একটা ঘটছে তো বটেই।
এই খবরের জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সূত্রটি জানাচ্ছে, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির দু’একজন নেতার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। করিমনগর জেলা পুলিশ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে গণপতির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছে।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, অসুস্থ মাওবাদী নেতা এখন ছত্তিসঢ় ও মহারাষ্ট্র সীমানার কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। যদিও মাওবাদীদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজের একটি লিখিত বিবৃতিতে দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটি গণপতির আত্মসমর্পণের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, স্রেফ মিথ্যা প্রচার ও ভিত্তিহীন খবর ছড়িয়ে মাওবাদীদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই আত্মসমর্পণের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে।
বর্তমানে সিপিআই মাওবাদীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গণপতি। কিন্তু ৭০ পেরনো প্রবীণ মাওবাদী নেতা দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। এমনকী অসুস্থতার জন্য ২০১৮ সালের শেষ দিকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে এই পদে নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ রয়েছেন।
তেলেঙ্গানার ভূমিপুত্র, কৃষক পরিবারের ছেলে গণপতি বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরে নকশাল আন্দোলন এবং ১৯৭০ সালে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। ২০০৪ সালে তাঁর নেতৃত্বেই সিপিআই (এমএল) পিপলস ওয়ার এবং এমসিসি মিশে গিয়ে সিপিআই মাওবাদী পার্টি তৈরি হয়। বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত নকশাল আন্দোলনকে এক ছাতার নীচে আনার কৃতিত্ব অনেকটাই গণপতির। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, মূলত চিকিৎসার জন্যই গণপতি আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন। যদিও প্রায় তিন দশকের বেশি সময় জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা এবং সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলন চালানো নেতার আত্মসমর্পণের খবর উড়িয়ে দিয়েছে মাওবাদীরাই।
Comments are closed.