একা গাড়ি চালানো, জগিং, সাইক্লিংয়ের সময় মাস্ক পরা কি বাধ্যতামূলেক? কী বলছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক
করোনা সংক্রমণ রুখতে রাস্তায় বেরলেই মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র। কিন্তু একা গাড়ি বা সাইকেল চালানো, জগিং করতে গেলেও কি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক? বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এ নিয়ে যে বিবৃতি দিল তা বিভিন্ন শহরের পুলিশ প্রশাসনের পদক্ষেপ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পর দেশের বিভিন্ন শহরে দেখা গিয়েছে গাড়িতে কেউ একাই রয়েছেন, কিন্তু মাস্ক না পরায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। কোথাও ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরমানা হচ্ছে, কখনও মাস্ক না পরে কেউ একা জগিং করতে গিয়ে পুলিশের ধাতানি খেয়েছেন, এমন উদাহরণ প্রচুর।
কিন্তু বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রক কখনোই বলেনি একা গাড়ি চালিয়ে বেরলে, সাইক্লিং করতে বা জগং করতে গেলে মাস্ক পরতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক নয়। এরপরেই তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কাজগুলি কেউ একা করেন না। জগিং বা সাইক্লিং করতে গেলেও সচরাচর একটা বা দুটো গ্রুপ নিয়ে বেরোন সবাই। সেক্ষেত্রে মুখে মাস্ক পরা জরুরি।
কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সেক্রেটারির এই বক্তব্যের সঙ্গে শহরাঞ্চলে পুলিশি পদক্ষেপের ছবিটা অনেকটাই আলাদা। বহু ক্ষেত্রেই গাড়ি বা সাইকেলে একা থাকা সত্ত্বেও সওয়ারি-চালককে ধর-পাকড় চলছে। রাস্তার মধ্যেই কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে মুখে মাস্ক না দেওয়ায়।
আসলে এখনও পর্যন্ত প্রশাসন মহলে এটা পরিষ্কার নয় যে, একা কেউ মাস্কহীন গাড়ি, সাইকেল নিয়ে বেরলে বা জগিং করতে গেলে তাঁকে আটকানো হবে কি হবে না। কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রক নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, বাড়ির বাইরে বেরলে সবার ক্ষেত্রেই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের ‘ন্যাশনাল ডিরেক্টিভ ফর কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক নির্দেশিকায় বলা আছে যে, পাবলিক প্লেসে মুখে ঢাকা দিয়ে বেরনো বাধ্যতামূলক। সে কর্মক্ষেত্রে হোক বা পরিবহণ ক্ষেত্রে। মূলত এই নির্দেশিকার জোরেই পুলিশ একা গাড়িতে থাকা ব্যক্তিকেও মুখে মাস্ক না পরার অপরাধে শাস্তি দিচ্ছে। কারোর যে নিজে থেকে নিজের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই, এই ব্যাখ্যায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন না পুলিশ অফিসাররা।
অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু শহরে এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। যেমন দিল্লি ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে ট্যুইট করে জানানো হয়েছে, গাড়িতে সঙ্গী থাকলে তবেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, নইলে নয়। কিন্তু জুনের এই ট্যুইট বার্তার পরেই দিল্লি ট্র্যাফিক পুলিশের অবস্থান অগাস্ট মাসে বদলে যেতে দেখা যায়। এক নেটিজেনের প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়, গাড়িতে একা থাকলেও মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক! অর্থাৎ, একা গাড়ি, সাইকেল নিয়ে বেরোলে অথবা একা জগিং করতে বেরোলে মাস্ক পরা বা না পরা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে যেমন পরিষ্কার অবস্থানের অভাব, তেমনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকও আলাদা আলাদা কথা বলছেন।
Comments are closed.