এনপিআর তৈরির জন্য বাবা-মায়ের জন্মস্থান, জন্মতারিখ, মাতৃভাষা বা শেষ ঠিকানা জানাতেই হবে, রাজ্যসভায় স্পষ্ট ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শুক্রবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় কত ভাষাভাষী মানুষ আছেন, কোন জেলা থেকে মানুষ অন্যত্র কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন, তা জানতে এনপিআর-এ এসব তথ্যই দরকার।
ক’দিন আগেই এনপিআরের নতুন তালিকা সংযোজন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিল্লির সরকারি বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দেয়, বাবা-মায়ের জন্মস্থান কিংবা জন্মতারিখ হল ‘ঐচ্ছিক’ বিষয়। অর্থাৎ, এনপিআর ফর্মে সংশ্লিষ্ট অংশটি নাগরিকরা পূরণ করতে পারেন আবার নাও পারেন। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর অভিযোগ, যদি এই কলামটি ঐচ্ছিক হয়, তবে রাখার প্রয়োজন কী? এই অংশ না পূরণ করলে নাগরিককে বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করেন তিনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতির সম্পূর্ণ উল্টোপথে গিয়ে জানিয়ে দিলেন, এনপিআর তালিকায় কোনও অংশই ‘ঐচ্ছিক’ নয়, সবই প্রয়োজনীয়।
এনআরসি-র সঙ্গে এনপিআর সম্পর্কযুক্ত। জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি দেখেই এনআরসি-র ভিত তৈরি হবে, এমন অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গ, কেরলে এনপিআরের কাজ মুলতুবি রাখা হয়েছে। এনপিআর নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন, ‘কেন মানুষকে মূর্খ বানাচ্ছেন?’ প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভায় বলেন, মাতৃভাষা নিয়ে আগে সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন সুরাটে ওড়িশার শ্রমিক কাজ করেন। তাই মাতৃভাষা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে স্পষ্ট তথ্য থাকলে সুরাটে ওড়িয়া ভাষা পড়ানো হবে কি না তার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, আগে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে মানুষ কম স্থানান্তর হত। কিন্তু বর্তমান সময়ে জানা দরকার, কত মানুষ কোন রাজ্যে স্থানান্তর হচ্ছেন, কোন জেলা থেকে মানুষ বেশি স্থানান্তর হচ্ছে। এসব তথ্য না থাকলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
এনপিআর নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করে মোদী বলেন, ২০১০ সালে কংগ্রেসই এনপিআর এনেছিল। কিন্তু ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির স্বার্থে এখন এনপিআরের বিরোধিতা করছে তারা। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশরা পাল্টা অভিযোগ করেন, ২০১০ ও ২০২০ সালের এনপিআর সম্পূর্ণ ভিন্ন। এনপিআর নিয়ে কংগ্রেস ‘ইউ-টার্ন’ নিচ্ছে বলে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নিজেই এনপিআর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতির উল্টো পথে হাঁটলেন। এনপিআর-এ যে বিষয়কে অমিত শাহের মন্ত্রক বলছে ‘ঐচ্ছিক’, সেটাই প্রধানমন্ত্রী বলছেন আবশ্যিক।
এর আগে দেশজুড়ে এনআরসি হবে বলে অমিত শাহ যে দাবি তুলেছিলেন, তা অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ২০১৪ সাল থেকে সারা দেশে এআরসি হওয়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। এটা সর্বৈব মিথ্যা। এবার এনপিআর নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতির উল্টো সুর গাইলেন মোদী।
Comments are closed.