রেল-কমিটির সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার নামে এক ব্যবসায়ীর থেকে ৬০ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগে মামলা হয়েছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়-সহ কয়েক জনের নামে। কয়েকবার কলকাতা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া এই নেতাকে। তবে শুক্রবার আদলতে যে চার্জশিট জমা পড়েছে, তাতে ৪ অভিযুক্তের নাম থাকলেও বাদ পড়েছে অন্যতম অভিযুক্ত মুকুল রায়ের নাম!
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সন্তু গাঙ্গুলি নামে বেহালার এক ব্যবসায়ী সরশুনা থানায় অভিযোগে করেন, পূর্ব রেলের জোনাল রেলওয়ে ইউজার্স কলসালটেটিভ কমিটির সদস্য পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ থেকে ‘১৬ সালের মধ্যে কয়েক দফায় ৪৬ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। ভুয়ো নিয়োগপত্র এবং আইডি কার্ড দিয়ে অতিরিক্ত ১৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মুকুল রায়, বিজেপি নেতা বাবান ঘোষ, রাহুল সাউ, সাদ্দাম হুসেন আনসারি এবং কামাল হুসেন আনসারির বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মুকুল রায় নিজাম প্যালেসে তাঁর সঙ্গে বাবান, রাহুলদের আলাপ করিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন বেহালার ব্যবসায়ী। গত বছর সেপ্টেম্বরে যার জন্য গ্রেফতারও হন বাবান ঘোষ সহ তিন জন। এখন তাঁরা জামিনে মুক্ত। এদিকে নোটিস পাঠিয়ে থানায় ডেকে একাধিকবার মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁর আগাম জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না বলে রক্ষাকবচ দেয় হাইকোর্ট।
শুক্রবার আলিপুর আদালতে পেশ করা চার্জশিটে মোট ৩৫ জনের সাক্ষ্য যুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক অভিযুক্তের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যে দেখা গেল চার্জশিটে মুকুল রায়ের নামই বাদ পড়েছে।
এই প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, মুকুল রায়কে নিয়ে কি রাজ্য সরকার মনোভাব বদলাচ্ছে? তা কি ভবিষ্যতের নতুন কোনও সমীকরণের ইঙ্গিত?
এর আগে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনেও প্রাথমিক এফআইআরে নাম ছিল মুকুলের। কিন্তু সে মামলাতেও দু’দফা চার্জশিটে তাঁর নাম আসেনি। তৃণমূল ছেড়ে আসার কারণেই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’য় তাঁর নামে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের আওতায় পর পর ৩৫ টা মামলা হয়েছে বলে একসময় সরব হয়েছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু কয়েকটি মামলার মূল চার্জশিটে তাঁর ‘ছাড়’ পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক তদন্তকারী জানান, এটা প্রথম চার্জশিট। পরবর্তী তদন্তে আর কারও ভূমিকা পাওয়া গেলে অতিরিক্ত চার্জশিটে নাম উল্লেখ করা হবে। আর মুকুলের দাবি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে কেউ। তবে শেষ পর্যন্ত আইনের জয় হয়।’ রাজনৈতিক মহলের জল্পনাকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা তথা অধুনা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়।
Comments are closed.