উনিশ শতকের ‘লাভ স্টোরি’ সিনেমা আপনার মনে পড়ে? মনে পড়ে কি সেই কিশোরী নায়িকাকে? হ্যাঁ, বিজয়েতা পন্ডিতের কথাই বলছি। কিন্তু তার সৌন্দর্যের মতো ছিল না তার ক্যারিয়ার। ছিল নানান সম্পর্কের বেড়াজাল, নানান উত্থান পতনের গল্প।
হরিয়ানার হিসারে জন্ম হলেও বিজয়েতার বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের আখড়া ছিল তার পরিবার, তবে তার দিদি সুলক্ষণা ছিলেন অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। তাই পড়াশোনার ফাঁকে দিদির সঙ্গে শুটিং দেখতে যেতেন বিজয়েতা। আর সেখানেই বদলে যায় তার জীবন। কারণ সেই সেটে উপস্থিত ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার, যিনি সদ্য শুরু করেছিলেন প্রযোজনার কাজ। আর এই সিনেমায় নিজের ছেলে গৌরব কুমারকে নায়ক হিসেবে বেছেছিলেন। চলছিল নায়িকার সন্ধান। আর সেই সেটেই বিজয়েতার উপর নজর পড়ে তাঁর।
বিজয়েতার বয়স তখন ১৪-১৫ বছর। তবে পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কায় রাজেন্দ্রর প্রস্তাবে পরিবারের তরফে কেউই রাজি হননি প্রথমে। কিন্তু বিজয়েতা পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় চালিয়ে যাবেন বলায় বাড়ির লোকেরা সম্মতি দেন। শুরু হয় কুমার গৌরব ও বিজয়েতার কেমেস্ট্রি। সেই সিনেমায় জনপ্রিয়তা পায় এই জুটি। আসতে শুরু করে একের পর এক ছবির প্রস্তাব। বাড়ে দুজনের ঘনিষ্ঠতাও। কিন্তু রাজেন্দ্র কুমার এই সম্পর্কে সম্মতি দেননি। তাই বিজয়েতার সঙ্গে কুমার গৌরবের জুটি ভেঙে দেন রাজেন্দ্র কুমার নিজে।
অন্য কোনও ছবির কাজের আশা করতে থাকেন বিজয়েতা। কিন্তু ছবি-নির্মাতারা সকলেই কুমার-বিজয়েতার জুটিকে চাইছিলেন। ফলে, ফিল্ম জগৎ থেকে বাড়তে থাকে তার দূরত্ব। এরপর ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘কার থিফ’ ছবিটি। এই ছবিতে সুনীল আনন্দের সঙ্গে অভিনয় করেন বিজয়েতা। এই ছবির পরিচালক সমীর মলকানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি। ছবিতে অভিনয় করলেও বিজয়েতার জীবন অন্য দিকে মোড় নেয় এরপরেই। তাঁর দিদি সুলক্ষণার সঙ্গে সঞ্জীব কুমারের গভীর সম্পর্ক এবং দিদির মৃত্যু এবং সঞ্জীব কুমারের মানসিক অবসাদের জন্য তাঁকে সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে বিজয়েতার উপর।
সেই সুবাদেই তাঁর আলাপ হয় আদেশ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। ধীরে ধীরে প্রেম হয় তাদের। ১৯৯০ সালে আদেশের সঙ্গে বিয়ে হয় বিজয়েতার। দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে ভাগ্যের পরিহাসে ক্যান্সারে মৃত্যু হয় তার স্বামীর। তারপরই নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে নেন বিজয়েতা। বর্তমানে বিজয়েতা সঙ্গীত জগৎ এবং সিনেমা জগৎ থেকে বহু দূরে। আর হয়তো ফিরবেন না কোনদিনই।
Comments are closed.