বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি? নিম্নবিত্ত বাঙালিদের মুম্বই থেকে তাড়ানোর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ মুম্বই মিররের প্রতিবেদনে
বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে ভিন রাজ্যে একাধিক বাঙালি নিগ্রহের ঘটনা সামনে এসেছে। এই প্রেক্ষিতে মুম্বইয়ের খড়ঘর, নভি মুম্বই থেকে প্রচুর বাঙালি শ্রমিক,পরিচারিকা বাধ্য হয়ে রাজ্যে ফিরে আসছেন বলে একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছে ‘মুম্বই মিরর’। এনআরসি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনপিআরের চাপে বাধ্য হয়ে রাজ্যে ফিরতে হচ্ছে কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকা প্রচুর মানুষকে। ফলে চাপের মুখে রুজি রোজগার ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসা প্রচুর নিম্নবিত্ত মানুষের অন্ন সংস্থানের সংকট তৈরি হচ্ছে।
১৩ মার্চ ‘মুম্বই মিরর’ এর একটি প্রতিবেদনে দাবি, মহারাষ্ট্রের কোপারা, বেলপাড়া, পিথগাঁওয়ের মতো জায়গায় বসবাস করা পশ্চিমবঙ্গের প্রচুর মানুষ ঘর খালি করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। কেউ কেউ কার্যত ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন। এতগুলো মানুষের রুজি- রোজগার বিপাকে পড়েছে শুধুমাত্র তাদের ভাষার জন্য!
মুম্বই মিররের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খড়ঘরের সেক্টর ১০-এর বস্তি এলাকায় থাকা ৮০ টির বেশি পরিবারের কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মুম্বই ছাড়া হতে হচ্ছে আশঙ্কা, আতঙ্কে। বাংলার ওই মানুষদের কাছে কেউ কেউ প্রমাণপত্র দেখতে চাইছে বলে দাবি করেন এলাকার এক বাসিন্দা।
খড়ঘরে থাকা বাঙলি শ্রমিক, যাঁরা বেশিরভাগই নির্মাণ কাজ, কাঠের কাজ, মিস্ত্রির কাজ, দর্জির কাজ, সবজি বিক্রি ইত্যাদিতে যুক্ত, কোনওরকমে একটি খুপড়ির মধ্যে দিনযাপন করতেন, আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তাঁরা রাজ্যে ফিরে আসছেন। বাঙালি ছাড়াও বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশার প্রচুর মানুষ রুজি-রোজগারের জন্য বাণিজ্য নগরীতে থাকেন। এমনই এক মুসলিম মহিলা তাঁর তল্পিতল্পা গুটোতে গুটোতে ‘মুম্বই মিরর’ এর সাংবাদিককে জানান, বাড়ির মালিক তাঁদের তাড়াতাড়ি ঘর খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকী বাড়ি না ছাড়লে পুলিশের ভয় দেখানো হয় বলেও জানান চার সন্তান নিয়ে থাকা ওই মহিলা। তাঁর দাবি, তিনি বাংলাদেশি নন, এ দেশেরই বাসিন্দা। মুর্শিদাবাদে তাঁর বাড়ি রয়েছে, কিছু আয়ের আশায় মুম্বইতে ছিলেন। সন্তানরা সবাই মুম্বইতেই জন্মেছে। স্বামী তাঁদের নাগরিক প্রমাণপত্র আনতে মুর্শিদাবাদ চলে গিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মহিলা চোখ মুছতে মুছতে জানান, আপাতত মহারাষ্ট্রের কৌকানে থাকা ভাইয়ের কাছে চলে যাচ্ছেন সবাই।
একই দশা দশ বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে মাসে হাজার বারো টাকা রোজগার করা ২৪ পরগনার নাফিসা আলির (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর স্বামী মুম্বই ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এখন নাফিসাও দুই সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান। তাঁর কথায়, আধার কার্ড সহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট রয়েছে আমার। কিন্তু কিছু লোক এসে বারবার আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চাপ দিচ্ছে, ডকুমেন্ট দেখতে চাইছে। খড়ঘর এলাকার বিজেপি নেতা নরেশ ঠাকুর অবশ্য এই অভিযোগ একপ্রকার মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, নয়া নাগরিকত্ব আইনের ‘ভয়ে’ নিজেদের পরিচয়পত্র জোগাড় করতে অনেকেই তাঁদের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তবে তিনি তাঁদের অযথা ভয় পেতে বারণ করেছেন। তাঁর কথায় আশ্বস্ত হয়ে অনেকেই মুম্বই ছাড়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন বলে দাবি ওই বিজেপি নেতার।
Comments are closed.