২০১৯ এর প্রথম ৯ মাসে একটিও ন্যানো উৎপাদন করেনি টাটা মোটরস, বিক্রি হয়েছে ১ টি গাড়ি! ২০২০ সালেই কি বন্ধ ন্যানো প্রজেক্ট, জল্পনা
২০০৬ সালের ১৮ ই মে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার শপথ নেওয়ার দিনই এক লাখ টাকার ছোট গাড়ির প্রকল্পের কথা মহাকরণে ঘোষণা করেছিলেন রতন টাটা। টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধারকে নিয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে সেদিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, হুগলির সিঙ্গুরে হবে এই ছোট গাড়ির প্রকল্প। তারপর সরকারের জমি অধিগ্রহণ এবং অনিচ্ছুক কৃষকের জমি রক্ষার দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র আন্দোলন, গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে এই ছোট গাড়ির প্রকল্প। বিরোধীদের লাগাতার আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের পুজোর মুখে কলকাতায় রতন টাটা ঘোষণা করেন, সিঙ্গুর প্রকল্প তাঁরা বাতিল করছেন, ন্যানো গাড়ির উৎপাদন হবে গুজরাতের সানন্দে। তারপর গঙ্গা, নর্মদা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে। প্রায় এক যুগ বাদে ২০১৯ সালে আরও একটা পুজোর মরসুমে প্রকাশ্যে এল এক ভয়াবহ তথ্য।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন নজিরবিহীন মন্দায় ভুগছে দেশের গাড়ি শিল্প, তখন রতন টাটার স্বপ্নের ন্যানো প্রজেক্টের অবস্থা আরও করুণ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর, বছরের প্রথম ৯ মাসে একটিও ন্যানো গাড়ি উৎপাদন করেনি টাটা মোটরস। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১ টি ন্যানো গাড়ি বিক্রি হয়েছে। সেটিও আবার ফেব্রুয়ারি মাসে। গত ৮ ই অক্টোবর এই খবর প্রকাশিত হয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া’তে।
সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুজরাতের সানন্দে মোট ২৯৭ ইউনিট ন্যানো উৎপাদন করেছিল টাটা মোটরস। আর সেই সময়ে বাজারে বিক্রি হয় ২৯৯ টি ন্যানো গাড়ি। সেখান থেকে চলতি বছরে ন্যানোর উৎপাদন এবং বিক্রি, দুটোই প্রায় বন্ধের মুখে। আগামী দিনে তারা আর ন্যানো তৈরি করবে কিনা, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করেনি টাটা মোটরস। তবে সূত্র বলছে, ২০২০ সালে এই মডেলটি বাজার থেকে তুলে নিতে চলেছে টাটা মোটরস।
ন্যানো উৎপাদন ও বিক্রির সামগ্রিক হাল দেখে এবং নতুন সেফটি রেগুলেশনের কারণে ন্যানো উৎপাদন অচিরে বন্ধ হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। টাটা মোটরসের এক আধিকারিক জানান, আগামী জানুয়ারি মাস থেকে দেশে নতুন সেফটি নর্মস চালু হবে। তাছাড়া বিএস ৬ এমিশন বিধি চালু হবে। সেক্ষেত্রে ন্যানো গাড়ি এই মাপকাঠি পূরণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তাছাড়া, টাটা মোটরসও ন্যানোর আপগ্রেডেশনে বিনিয়োগ করতে আর আগ্রহী নয় বলেই খবর।
২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে দিল্লির অটো এক্সপোতে প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল ন্যানো। মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার স্বপ্নপূরণ হবে এক লক্ষ টাকা মূল্যের ন্যানোর হাত ধরে, এ নিয়ে প্রবল আশাবাদী ছিল টাটা মোটরস। তৃণমূলের নেতৃত্বে সিঙ্গুর আন্দোলন চলার মাঝেই ন্যানোর প্রকাশ্যে আসার সেই অনুষ্ঠানে রতন টাটা এই গাড়ির নামকরণ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘ডেসপাইট মমতা’। সেই প্রকল্পই পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুজরাতের সানন্দে সরে যাওয়া, সব মিলিয়ে খবরের শিরোনামে ছিল রতন টাটার এই স্বপ্নের প্রজেক্ট। অবশেষে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে বাজারে আত্মপ্রকাশ করে ন্যানো। কিন্তু ন্যানো চালানোর সময় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় প্রথমেই ধাক্কা খায় এর বাজার। টাটার অন্দরেই স্বীকার করা হয়, ন্যানোকে সর্বাপেক্ষা সস্তা গাড়ি হিসাবে প্রচার করতে গিয়েই ভুল হয়েছিল তাদের। প্রথম উৎপাদনের সময় থেকেই ন্যানো বিক্রিতে লোকসান হয়েছে টাটার। শুধুমাত্র আবেগের কারণে টাটা মোটরস ন্যানো উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে বলে এক সময় বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি। সেই ন্যানো গাড়িরই উৎপাদন সম্ভবত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আগামী বছর থেকে।
Comments are closed.