অফিসে কাজের মাঝে ঘুমোতে ন্যাপ-রুম চান দেশের ৮৬ শতাংশ কর্পোরেট কর্মী, সমীক্ষায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
আপনি কি কর্মক্ষেত্রে ঘুমের পক্ষে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে ভয় পাবেন না, আপনি একা নন। অফিসে একটু ঝিমিয়ে নেওয়ার জন্য আলাদা জায়গা বা ন্যাপ-রুমের পক্ষে সওয়াল করছেন দেশের শতকরা ৮৬ শতাংশ কর্পোরেট কর্মী। তাঁরা বলছেন, এতে কাজে উৎসাহ যেমন বাড়বে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাবে তাঁদের উৎপাদনশীলতাও। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ কর্মীই ভুগছেন ঘুমজনিত বিভিন্ন সমস্যায়।
অনলাইন ঘুমজনিত সমস্যার দাওয়াই বাতলে দেওয়া স্টার্টআপ Wakefit.co তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে একথা জানিয়েছে। স্টার্টআপটি দেশের বড় শহরগুলোতে দেড় হাজারের বেশি বেসরকারি সংস্থার কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে। প্রশ্ন ছিল, ঘুমের সময়ের অদলবদল হচ্ছে কিনা, কাজের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় কোনটা এবং কর্মক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতার জন্য সংস্থার কী করা উচিত। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশের বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের কালবিলম্ব না করে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া উচিত, বিশেষ করে উচিত অফিসেই ন্যাপ-রুমের ব্যবস্থা করা।
গোদরেজ, অ্যাকসেনচর, গুগল, ভারতী এয়ারটেল কিংবা কোকাকোলায় ইতিমধ্যেই কর্মীদের কাজের মাঝে ঘুমের জন্য পৃথক জায়গা, ন্যাপ-রুম রয়েছে। কিন্তু এই নামগুলো ব্যতিক্রম মাত্র। সিংহভাগ সংস্থাই এখনও এবিষয়ে কিছুই করেনি। তার প্রমাণ, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া দেড় হাজার মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশের অফিসেই নেই ন্যাপ-রুম।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রতি ৫ জন কর্মীর মধ্যে ১ জনের কাজে বসলেই ঘুমে চোখ ভেঙে আসে। Wakefit.co র ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান স্লিপ স্কোরবোর্ডে’ দেখা যাচ্ছে, ৮০ শতাংশ কর্মীরই সপ্তাহে একবার থেকে তিনবার, অফিসে কাজের মধ্যেই ঢুলতে থাকেন। সমীক্ষায় উঠে এসেছে এর কারণও। কর্পোরেট সংস্থায় কর্মীদের প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে কাজের চাপ। পাশাপাশি, প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন জানাচ্ছেন, তাঁদের ক্লান্তির মূল কারণ অফিসে আসার দীর্ঘ এবং সমস্যা সঙ্কুল পথ। ভিড়ে ঠাসা বাস, কিংবা বাদুরঝোলা ট্রেন বাদ দিলেও, অফিসমুখী রাস্তায় লাগাতার ট্রাফিকের কারণেও অনেকেই অফিসে ঢোকার আগেই হাঁফিয়ে যান। যার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে ওই কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য এবং অতি অবশ্যই তাঁর কাজের উপর। যার ফলশ্রুতি ঘুমের সময়ের পরিবর্তন এবং ব্যাঘাত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গিয়েছে সমীক্ষায়। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কর্পোরেট কর্মীদের কাছে প্রশ্ন ছিল, দিনের ঠিক কোন সময় সবচেয়ে বেশি ঘুম পায়? তাঁরা সমস্বরে জানিয়েছেন, দুপুর ১ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত চোখ খুলে রাখাই দায়। ৬৮ শতাংশ কর্মী এই সময়কেই দিনের সবচেয়ে বেশি ঘুম পাওয়ার সময় হিসেবে মেনে নিয়েছেন। আর অফিসে কাজের মাঝে একটু ঘুমের সুযোগ না পেলে কী হয়, তা জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা বলছেন, কর্পোরেট কর্মীদের প্রায় প্রত্যেকেই পিঠে ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। তার প্রধান কারণ, অফিসে ঝিমুনি এলে একটু গা এলিয়ে দেওয়ার জায়গার অভাব।
ঘুম তাড়াতে যা যা করা হয় তা অবশ্য চিরাচরিত প্রথা মেনেই। তবে তাতে কতটা কাজ হয়, বলা মুশকিল। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কর্মীদের কাছে প্রশ্ন ছিল, কাজের মাঝে বেদম ঘুম পেলে তা তাড়ান কীভাবে? ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ৩৪ জন চা বা কফি খান, সামান্য হাঁটাহাটি করে আবার কাজে বসেন ৩২ শতাংশ, চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে ঘুম তাড়ান প্রতি একশোয় ১৩ জন আর ১০ শতাংশ কর্পোরেট কর্মী ঝিমুনি এলে সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে ঘুম কাটান।
Comments are closed.