সোমবার মধ্যরাতে ৩১১-৮০ ভোটে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর তার পর থেকেই নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর, সিকিমে পথে নামল আমজনতা। কোথাও পুড়ল দোকানবাজার, গাড়ি। কোথাও পোড়ানো হল অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কুশপুতুল, বনধ-হরতালে মঙ্গলবার ভোর থেকে অচল হয়ে রইল অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা। আগরতলায় স্কুল,কলেজ সব বন্ধ রইল। বিল বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ল দক্ষিণেও। সেখানে মিছিল হল, সভা হল। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিলেন আর এক পদত্যাগী আইএএস অফিসার এস শশীকান্ত সেন্থিল। তিনি দক্ষিণ কন্নড়ের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রতিবাদে আইএএস অফিসার কন্নন গোপীনাথন ইস্তফা দেওয়ার পর সেন্থিলও পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি দেশের মানুষকে এনআরসি কিংবা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের জন্য কোনও কাগজপত্র সরকারের কাছে জমা না দেওয়ার আর্জি জানান। বলেন, আমি নিজেও কোনও কাগজ দিচ্ছি না। সরকার যা পারে, করে নিক।
অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ও নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন, এই দুই ছাত্র সংগঠনের জোড়া বনধে অচল হয়ে পড়েছে অসমের স্বাভাবিক জীবন। এই বিক্ষোভের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে ত্রিপুরা থেকে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। অসমের মালিগাঁও শহরে সরকারি বাসে ইট পাটকেল পড়া থেকে শুরু করে মোটরবাইক, স্কুটারে আগুন লাগানো, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিলের বিরোধিতায় ক্রমশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে অসমে। স্কুল-কলেজ থেকে দোকানপাট সবকিছুই বন্ধ ছিল এদিন। গুয়াহাটি শহর থেকে বিশাল মিছিল বেরয়। রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে ছোট বড় মিছিল। বিধানসভা ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। রাজ্যজুড়ে ট্রেন, বাস চলাচল, সড়ক পথের যাবতীয় যোগাযোগ এদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে ডিব্রুগড়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সিআইএসএফ জওয়ানরা। দুলিয়াজান এলাকার অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডে ঢুকতে চাইলে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় জওয়ানরা। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ছাত্র সংগঠনের ডাকা সকাল ৫ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত বনধে টায়ার পুড়িয়ে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বনধে সাড়া না দিয়ে কিছু ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধের বিরোধিতা করলে তেজপুর এলাকার বিভিন্ন দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অসম ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় মিজোরাম ও ত্রিপুরায়ও আন্দোলনের প্রভাব পড়ে। নর্থ-ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের ডাকা বনধের জেরে যাবতীয় পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করে ত্রিপুরার শিক্ষা দফতর। তবে হর্নবিল ফেস্টিভ্যালের জন্য নাগাল্যান্ডে কোনও বিক্ষোভ বা বনধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। বিলের প্রতিবাদে অসমের বিখ্যাত চিত্র পরিচালক জাহ্নু বড়ুয়া নিজের নাম সরিয়ে নিয়েছেন অসম স্টেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের তালিকা থেকে। অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সরকারের এই বিলের ফলে উত্তর-পূর্বের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সর্বোপরি জনগণের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
Comments are closed.