যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি শেষ পর্যন্ত সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব (স্পেশাল কনভোকেশন) স্থগিত রাখারই সিদ্ধান্ত নিল শনিবার। সমাবর্তনের এই বিশেষ পর্বেই রাজ্যপাল তথা আচার্য প্রাপকদের সাম্মানিক ডিলিট বা ডিএসসি দিয়ে থাকেন। এবার কবি শঙ্খ ঘোষ, প্রাক্তন বিদেশ সচিব সলমন হায়দারকে ডিলিট এবং বিজ্ঞানী সি এন রাও, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা ব্যানার্জিকে ডিএসসি দেওয়ার কথা ছিল। মাস খানেক আগে এই সম্মান দেওয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি এই নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি বিধানসভায় নতুন যে উচ্চশিক্ষা বিধি এনেছে, তাতে রাজ্যপাল এবং উপাচার্যদের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের খবর, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল যেভাবে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, তা বন্ধ করার জন্যই সরকার নয়া বিধি এনেছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি ঘনিষ্ঠ মহলে সেটা বলেও ফেলেছেন। নয়া উচ্চশিক্ষা বিধি অনুযায়ী সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব স্থগিত রাখার বিষয়টি রাজ্যপাল তথা আচার্যকে জানানোর কোনও বাধ্যকতা নেই। উপাচার্যদের তা উচ্চশিক্ষা দফতরকে জানালেই চলবে।
সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ সমাবর্তনে রাজ্যপাল এলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের হাত থেকে রক্ষা করতে যাদবপুরে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ উপেক্ষা করেই। তখন থেকেই রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত পর্বের সূচনা। এখন বিভিন্ন ইস্যুকে ঘিরে এই সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। তার মধ্যেই এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাজ্যপাল একেবারেই খোলাখুলি কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করে নানা ধরনের বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। এতে পড়ুয়ারা আরও ক্ষেপে উঠেছেন। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপাল এলে তাঁরা তাঁকে বয়কট তো করবেনই। পাশাপাশি তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখাবেন। পড়ুয়াদের সেই হুমকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা একটূ ভয়ে ভয়ে ছিলেন। কোনও রকম অশান্তি এড়াতেই বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে নয়া বিধি আসার পর রাজ্যের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সমাবর্তন স্থগিত রাখে রাজ্যপালকে এড়ানোর জন্যই। এরপর যাদবপুরে সমাবর্তনের বিশেষ পর্ব স্থগিত ঘোষণাকে রাজ্যপাল কেমন ভাবে নেন, সেটাই দেখার।
Comments are closed.