দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতকে কোণঠাসা করতে পাকিস্তান ও চিনের পরস্পরের কাছাকাছি আসার খবর নতুন নয়। তা সে পাক অধিকৃ্ত কাশ্মীরে পরিকাঠামো নির্মাণে চিনা সহযোগিতা হোক বা মুম্বই বিস্ফোরণের মাস্টার মাইন্ড মাসুদ আজাহারকে জঙ্গি তকমা দেওয়ার বিরোধিতা করে বিশ্ব মঞ্চে চিনের পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো হোক, পাক-চিনা সখ্যতা ক্রমেই বাড়ছে।
অন্যদিকে, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বর্তমানে ইতিবাচক জায়গাতেই রয়েছে। মাঝে বাণিজ্যিক পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে দুদেশের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এখন ভারতকে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবেই দেখছে। এরই উল্টোপথে সীমান্ত ইস্যুতে ভারত চিন সম্পর্ক বর্তমানে প্রায় খাদের কিণারে দাঁড়িয়ে আছে বলা চলে। সাম্প্রতিক অতীতে লাদাখ ও অরুণেচল প্রদেশের ডোকালামে ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে উত্তেজনা এমন যায়গায় পৌঁছেছিল যে আলোচনায় বসতে হয় দু-দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে। এখনও মাঝে-মাঝেই নানা ইস্যুতে সংঘাত বাঁধছে দুই দেশের মধ্যে। আর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। জঙ্গি ইস্যু থেকে শুরু করে পাক অনুপ্রবেশ, সীমান্তের এপারে পাক সেনার হামলা হোক বা কাশ্মীর ইস্য, প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা ক্রমে বাড়ছে।
এই অবস্থায় চিনের প্রতি পাক নির্ভরতার নয়া তথ্য সামনে এসেছে। ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’কে উদ্ধঋত করে পাক সংবাদপত্র ডন জানিয়েছে, অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন নির্ভরতা কমাচ্ছে পাকিস্তান। তুলনায় চিনের থেকে বেশি অস্ত্র আমদানি করছে পাক সেনা। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, ওবামা প্রশাসনের কার্যকালের শেষের দিকে আমেরিকার থেকে ৮টি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান কেনার কথা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের অনুমতি না মেলায় তা আর হয়ে ওঠেনি। এর পরই এফ-১৬ এর থেকে নজর ঘুরিয়ে পাক নেতৃত্ব চিনের থেকে জেএফ-১৭ যুদ্ধ বিমান কেনার চেষ্টা শুরু করে। ২০০৭ সালে চিনের থেকে দুটি জেএফ-১৭ যুদ্ধ বিমান কেনে পাকিস্তান। পরে চিন জেএফ-১৭ যুদ্ধ বিমান তৈরির নকশাও পাকিস্তানকে দেয়, যাতে পাক সেনা সেগুলি নিজের দেশেই তৈরি করতে পারে। প্রয়োজনে দেশে নির্মিত এই যুদ্ধ বিমানগুলি তৃতীয় কোনও দেশকে বিক্রির অনুমতিও চিনের তরফে পাকিস্তানকে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালে পাকিস্তানের আবেদন সত্বেও যখন নয়া এফ-১৬ যুদ্ধ বিমানের দাম কমাতে অস্বীকার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তখন চিন পাকিস্তানকে ৮টি সাবমেরিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
আরও জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছিল। যা ২০১৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে, ২০১৭ সালের পরিসংখান বলছে, চিনের থেকে প্রায় ৫১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে পাকিস্তান। বর্তমানে চিনই হল পাকিস্তানকে সবথেকে বেশি অর্থের অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্যই বলে দিচ্ছে ধীরে ধীরে নিজেদের বিদেশনীতিতে বদল আনছে পাকিস্তান। মার্কিন নির্ভরতা কাটিয়ে ক্রমে তারা চিনের সহযোগী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। যার অন্যতম লক্ষ্য ভারতকে চাপে রাখা। পাক-চীন এই ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও শক্তি ভারসাম্যে কী প্রভাব ফেলে সে দিকেই নজর আন্তর্জাতিক মহলের। গোটা বিষয়ের ওপর নজর রাখছে ভারতও।