মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে দেশে ৩০ টি লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ২৪ টি তেই হার বিজেপির!
লোকসভা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। ২০১৪ সালে মোদীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার তৈরি করা বিজেপি কি এবারও বজায় রাখতে পারবে জয়ের ধারা? নাকি বদলের হাওয়ায় সরকার গড়বে অবিজেপি কোনও দল কিংবা জোট? উত্তর মিলবে ২৩ মে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন গত পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে হওয়া লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির সাফল্যের হার মাত্র ২০ শতাংশ। ২০১৪ ভোটের পর সারা দেশে মোট ৩০ টি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে বিজেপি জিততে পেরেছে মাত্র ৬ টি আসন।
২০১৪ সালে মোদী সরকার গড়ার সেই বছর পর দেশের বিভিন্ন অংশের ৬ টি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে বিজেপি প্রার্থীরা জয়লাভ করেন মহারাষ্ট্রের বিড এবং গুজরাতের ভাদোদরা আসনে। বাকি ৪ টি আসনে পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থীরা। এই আসনগুলি হল তেলেঙ্গানার মেডাক, ওয়ারাঙ্গল, ওড়িশার কন্ধমাল এবং উত্তর প্রদেশের মইনপুরি।
২০১৫ সালে উপনির্বাচন হয় এরাজ্যের বনগাঁ এবং মধ্য প্রদেশের রতলাম ঝাবুয়াতে। দুটি আসনেই পরাজিত হয় বিজেপি। বনগাঁয় জয়লাভ করেন তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুর। তৃতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর। অন্যদিকে, রতলাম ঝাবুয়াতে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন কংগ্রেসের কান্তিলাল ভুরিয়া।
২০১৬ সালে সারা দেশে ৫ টি কেন্দ্রে লোকসভা উপনির্বাচন হয়, তার মধ্যে অসমের লখিমপুর ও মধ্য প্রদেশের শাহদোল আসন জেতে বিজেপি। এরাজ্যের তমলুকে জেতেন তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী। সাংসদের মৃত্যুতে কোচবিহার লোকসভাতেও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও জয় পায় তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। মেঘালয়ের তুরায় জয় পান এনপিপি-র কনরাড সাংমা।
২০১৭ সালে সারা দেশে ৪ টি আসনে উপনির্বাচনে একটিও জিততে পারেনি বিজেপি। উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কেরলের মলপ্পুরম, পঞ্জাবের অমৃতসর, জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর এবং পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে। মলপ্পুরমে আইইউএমএল, অমৃতসর ও গুরুদাসপুরে কংগ্রেস এবং শ্রীনগরে ন্যাশনাল কনফারেন্স জয়লাভ করে।
২০১৮ সালে দেশের ১৩ টি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রের পালঘর এবং কর্ণাটকের শিবমোগা আসনে জিতেছে বিজেপি। বাকি ১১ টি আসনেই পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থীরা। মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা গোন্ডিয়া আসনে জেতেন এনসিপি প্রার্থী, রাজস্থানে অলওয়ার ও অজমেঢ় আসনে জেতে কংগ্রেস। এরাজ্যের উলুবেড়িয়া আসনে জেতেন প্রয়াত সুলতান আহমেদের স্ত্রী সাজদা আহমেদ। বিহারের আরারিয়া সিটে বিজেপিকে হারিয়ে জয় পান আরজেডি প্রার্থী সরফরাজ আলম। উত্তর প্রদেশের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন গোরখপুর ও ফুলপুরেও পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থীরা। যোগী আদিত্যনাথের ছেড়ে যাওয়া গোরখপুর আসনে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পায় সমাজবাদী পার্টি। একইভাবে উপ মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের ছেড়ে যাওয়া ফুলপুর আসনেও বিজেপিকে হারিয়ে জয় পায় অখিলেশ যাদবের পার্টি। কৈরানায় উপনির্বাচনেও বিজেপির পরাজয়ের ধারা অব্যাহত। রাষ্ট্রীয় লোকদলের তবস্সুম হাসানের কাছে পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থী মৃগাঙ্গা সিংহ। এছাড়া কর্ণাটকের বেল্লারিতে বিজেপিকে হারিয়ে জয় পায় কংগ্রেস। কর্ণাটকেরই মাণ্ড্য কেন্দ্রে বিজেপিকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জেডিএস প্রার্থী। কৈরানা, ভান্ডারা গোন্ডিয়া, গোরখপুর, ফুলপুর আসনগুলি ২০১৪ সালে জিতেছিল বিজেপি কিন্তু ২০১৮ সালের উপনির্বাচনে সবকটি আসনই তাদের হাতছাড়া হয়।
মোদী সরকার গঠনের পর একাধিক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। বিহার, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটক সহ একাধিক বড় রাজ্যে ভোট হয় মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। এর মধ্যে মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাতে সরকার গঠন করে বিজেপি, বাকি সব বড় রাজ্যেই হেরে যায় গেরুয়া শিবির।
এটা হয়তো ঠিকই সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রেক্ষিতে লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে চলেছে কয়েক সপ্তাহ বাদেই। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন লোকসভা আসনে উপনির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনে যা প্রবণতা, তা আদৌ মোদী-অমিত শাহর পক্ষে স্বস্তির নয়।
Comments are closed.