কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে অবিজেপি রাজ্যে প্রতিহিংসার মনোভাব নিচ্ছে কেন্দ্র, মমতার সুর এবার সিপিএমের গলায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের ওপর মোদী সরকারের প্রতিহিংসার অভিযোগ। এবার সিপিএমের মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রেসি’র সম্পাদকীয়তেও উঠে এল সেই তত্ত্ব।
বিরোধী রাজ্যগুলোর উপর প্রতিহিংসার মনোভাব নিচ্ছে মোদী সরকার। এই অভিযোগ এবার তোলা হল সিপিএমের মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রেসির সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো প্রাক্তন আমলাদের একটি চিঠির কথা উল্লেখ করে পিপলস ডেমোক্রেসির সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, অবিজেপি রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থানে বিজেপি এবং তার জোটসঙ্গীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইএএস ও পুলিশ আধিকারিকদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে কমিশনের দ্রুততা সবাই লক্ষ্য করেছে। কিন্তু বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও সেই তৎপরতার লেশমাত্র দেখা যায়নি তামিলনাড়ু কিংবা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে। ত্রিপুরার একজন রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে বারবার গুরুতর অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও তাঁকে সরায়নি কমিশন, বলেও অভিযোগ করা হয়েছে সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে।
১০ ই এপ্রিল প্রকাশিত সিপিএমের মুখপত্রের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে, মোদী সরকার কীভাবে একের পর এক কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিজের ভোট-স্বার্থে ব্যবহার করছে, তা বলা হয়েছে একাধিক ঘটনার কথা তুলে ধরে। সম্প্রতি বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলিতে তৎপর হয়েছে আয়কর দফতর। সারা দেশের বদলে কেন বেছে বেছে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতেই আয়কর হানা চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সম্পাদকীয়তে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটে যে কোনও মূল্যে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার পক্ষে সিপিএম। কিন্তু কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে-অফিসে আয়কর হানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে আসছে বলে লেখা হয়েছে সম্পাদকীয়তে।
সিপিএমের মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রেসির সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো, নির্বাচন ঘোষণার পর আয়কর দফতরের এই অভিযানগুলি শুরু হয়েছে। যেখানে নির্বাচনী আচরণ বিধি লাগু হওয়ার পর সমস্ত সরকারি সংস্থাই কমিশনের আওতায় চলে আসে। কিন্তু মোদী সরকার নির্বাচন কমিশনকে এড়িয়ে আয়কর দফতর এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেসকে নিয়ে বেছে বেছে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এমন একটা আবহ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যেন একমাত্র বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলিতেই দুর্নীতি, কালো টাকার কারবার চলে, লেখা হয়েছে সম্পাদকীয়তে। এখনও পর্যন্ত বিজেপি এবং তার জোটসঙ্গীদের বিরুদ্ধে এমন একটিও অভিযান না হওয়ায় এই সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে আরও। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, এই ধরনের অভিযানে মূলত দ্বিমূখী উদ্দেশ্য সাধিত হয়। বিরোধী দলগুলিকে আর্থিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার পাশাপাশি মোদীর দুর্নীতি বিরোধী ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোদী এই ইস্যুকে তাঁর প্রচারে তুলে ধরতেও সময় নষ্ট করেননি। যাঁদের বাড়ি-অফিস থেকে রাশি রাশি কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে, তাদের ‘বড়ে লোগ’ বলে বর্ণনা করেছেন, যাতে নিজের গরিব দরদী ইমেজকে আরও আরও ঝলমলে লাগে। প্রতিবেদনে উল্লেখ, আয়কর দফতরের বিরোধীদের বিরুদ্ধে এই অতি সক্রিয়তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্বল জবাব এসেছে কমিশনের তরফ থেকে।
Comments are closed.