বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথ নেবেন দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তার আগের দিন, বুধবার ওই মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হল।
আইসিএসআর-এর অধ্যাপক তথা সমাজকর্মী মধুপূর্ণিমা কিশওয়ারের করা মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, বিচারব্যবস্থা সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং অন্যতম স্তম্ভ। বিচার বিভাগের শক্তি দেশের মানুষের তার উপরে বিশ্বাসকে নির্ভর করে গড়ে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তে তাতে আঘাত লাগতে পারে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলেও দাবি করা হয়েছে।
এই আবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যসভার সদস্য করার এই সিদ্ধান্তে রাজনীতির রঙ লেগেছে। ফলে বিচারপতি হিসেবে তিনি যে রায়গুলি দিয়েছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এই সিদ্ধান্ত দেশ ও আইন বিরোধী বিভিন্ন বিভেদপন্থী শক্তির হাত শক্ত করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই জনস্বার্থ-আর্জিতে।
এই সিদ্ধান্ত রদের পাশাপাশি যাতে, ভবিষ্যতে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কোনও সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার আবেদনও জানানো হয়েছে।
এদিকে বুধবার রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার সার্টিফিকেট হাতে পেয়েই বাম-কংগ্রেস জোটের জয়ী প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই মনোনয়ন নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, অবসরের পর তিন মাস না যেতেই প্রধান বিচারপতির এই মনোনয়ন বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল বার্তা দেবে। তাঁর মন্তব্য, শাসকের দাপাদাপিতে অনেক সময় বিচারপতিদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আদালতের একাধিক রায়ে তার ছাপ পড়ছে। শাসকের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরা পুরস্কার পাচ্ছে। যাঁরা সঙ্গে নেই, তাঁদের তিরস্কার জুটছে। বিকাশরঞ্জন বলেন,
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হয়ত ভাবছেন, তিনি এতে সম্মানিত হলেন। আসলে তিনি নিজেকেই অসম্মানিত করলেন। তাঁর এই মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করা উচিত ছিল।
রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার সরকারের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পরই শুরু হয় বিতর্ক। আইনসভার সঙ্গে বিচারসভার দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিকে তুলে ধরে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সামিল হন বহু আইনজ্ঞ ও প্রাক্তন বিচারপতিরা। রঞ্জন গগৈ কেন সরকারের এই প্রস্তাব মেনে নিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থরাও। যদিও রঞ্জন গগৈ এই বিষয়ে নিজের মত জানিয়ে বলেছেন, তিনি মনে করেন দেশের স্বার্থে আইন ও বিচারসভার একসাথে কাজ করা উচিত তাই তিনি এই মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন। শপথ গ্রহণের পর তিনি সব জানাবেন বলে কয়েকদিন আগে মন্তব্য করেন রঞ্জন গগৈ।
Comments are closed.