অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর জেদঃ আর্থিক, পারিবারিক, শারীরিক বাধাকে জয় করে প্রমিতার আইনজীবী হওয়া এক স্বপ্নপূরণ
অদম্য ইচ্ছার কাছে যে কোনও প্রতিকূলতাই ম্লান, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন বছর আঠাশের প্রমিতা অগাস্টাইন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, আর্থিক প্রতিকূলতা, বাবা-মায়ের দুরারোগ্য অসুখ, আর গত বছর কেরলের ভয়ঙ্কর বন্যায় ভেসে যাওয়া একমাত্র বাসস্থান, কোনও কিছুই টলাতে পারেনি সাড়ে তিন ফুট লম্বা প্রমিতা অগাস্টাইনের লক্ষ্যকে। ছোট থেকেই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল আইনজীবী হওয়া। অবশেষে, ১৬ ই জুন কেরল হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করলেন প্রমিতা অগাস্টাইন।
কেরলের এর্নাকুলাম জেলার অখ্যাত গ্রামে জন্ম প্রমিতা অগাস্টাইনের। বাবার পেশা কৃষিকাজ, আর্থিক অনটন পরিবারের নিত্যসঙ্গী। সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার জন্য ছোটবেলা থেকেই স্কুলে সহপাঠীদের উপহাস শুনতে হয়েছে। তাঁর কথায়, শারীরিক উচ্চতার জন্য সহপাঠীদের ব্যঙ্গ তাঁকে কষ্ট দিত। স্কুলে সেভাবে পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত দু’বার পাল্টাতে হয়েছে স্কুল। এরপর এক মাসির কাছে থেকে কোচির এক কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেন প্রমিতা।
এদিকে, অসুস্থ বাবা-মা, নিজের শারীরিক অবস্থার জন্য কোনও ভারী কাজ করতে পারেন না। একটু বেশি হাঁটলেই হাঁপিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা যখন পরীক্ষাপত্রে টানা লিখে চলতেন, তখন দুর্বল আঙুলে কলম নিয়ে পরীক্ষাপত্রেও চলত তাঁর আর এক লড়াই। এভাবেই আলুভার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ফর উইমেন থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন প্রমিতা। আইনেও ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রমিতা জানান, বাবা হার্টের রোগী, মায়েরও কিডনির অসুখ। ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে চলত কৃষিকাজ। গত ২০ বছর ধরে তীব্র আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েও তাঁর পড়াশোনা চালানোর কোনও খামতি রাখেননি বাবা-মা। প্রতিদিন সাহস যুগিয়েছেন ভাই-বোনেরা। এই সাহসই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে আইনকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার।
সব কিছু যখন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছিল, তারপরেই এলো প্রাকৃতিক বাধা। ২০১৮ সালের অগাস্টের বন্যায় ভেসে গেল প্রমিতা অগাস্টাইনের একমাত্র ভিটে। বাড়িতে ঢোকা বন্যার জল ছিল তাঁর উচ্চতার সমান। কোনওক্রমে তাঁকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন বাবা, মা, দুই ভাই ও এক বোন। এরপর দুটো ত্রাণ শিবিরে কেটেছে কয়েক মাস। কিছুদিন আগেই স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে, এক কামরার একটি অস্থায়ী বাড়িতে এখন ৬ জনের সংসার চলছে।
এর মধ্যেই নিরলস পরিশ্রম করে নিজের স্বপ্নপূরণ করে ফেলেছেন প্রমিতা অগাস্টাইন। এখন তিনি কেরল হাইকোর্টের আইনজীবী। এত বাধার মুখে কখনও ভেঙে পড়েননি? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে সাড়ে তিন ফুট চেহারার ফুটে ওঠে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি। বলেন, বাধা তো থাকবেই, জীবন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, কিন্তু এগিয়ে যেতে হবে। প্রমিতার কথায়, আইনজীবী হতে চেয়েছিলাম, হতে পেরেছি। এখন মানুষকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়াই তাঁর আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ বলে জানালেন কেরলের প্রমিতা অগাস্টাইন।
Comments are closed.