শাহের পঞ্চবাণেই বাংলায় BJP বধের ব্লু-প্রিন্ট পিকের! জানেন কোন পাঁচ কৌশল?

জানেন কী সেই কৌশল? 

বাংলা দখলে ৫ কৌশলে ধার দিচ্ছে বিজেপি। লক্ষ্য ২০০ আসন। এবার বিজেপির মিশন বেঙ্গল বানচাল করতে সেই ৫ ফর্মুলাতেই ভরসা তৃণমূলের ভোট কুশলী পিকের। অবাক হলেন? 

সম্প্রতি ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের আইডিয়া এক্সচেঞ্জ অনুষ্ঠানে বাংলা দখলে বিজেপির ৫ কৌশল বর্ণনা করলেন প্রশান্ত কিশোর। বিজেপির অস্ত্রেই বিজেপিকে ঘায়েল করতে প্রস্তুত তৃণমূল, জানাচ্ছেন পিকে। 

কী সেই কৌশল? 

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পলিটিকাল এডিটর এবং ন্যাশনাল ব্যুরো চিফ রবীশ তিওয়ারিকে পিকে জানালেন বাংলা জয়ে বিজেপির ৫ সূত্র। পাশাপাশি জানালেন কীকরে এই ৫ সূত্র তৃণমূলের হাতের ৫ হয়ে উঠল। 

 

১। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ

পিকে বলছেন, বিজেপি সমীকরণে সফল। কিন্তু প্রশ্ন হল, বিজেপি কি ৬০% সংখ্যাগুরু ভোট দখলে সক্ষম? পিকের দাবি, উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাত, যেখানে মেরুকরণের তাস খেলে সফল হয়েছে বিজেপি, সেখানে ৫০-৫৫% সংখ্যাগুরু ভোট দখলে সফল হয়েছে বিজেপি। কিন্তু বাংলা জিততে গেলে বিজেপিকে পেতে হবে সংখ্যাগুরুর অন্তত ৬০% এর সমর্থন। প্রশান্ত কিশোরের হিসেব বলছে তাতে ব্যর্থ মোদী-শাহ।

 

২। মমতার বিরুদ্ধে মানুষের রাগ 

প্রশান্ত কিশোরের মতে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। তৃণমূলের বিরুদ্ধেও রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে। মানুষের রাগও আছে সরকারের উপর। প্রশান্ত কিশোর বলছেন, এই রাগ বা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা স্থানীয় স্তরে সীমাবদ্ধ। বাংলার মানুষ এখনও মমতা ব্যানার্জির উপরই ভরসা রাখছেন, মনে করেন পিকে। ভোট কুশলীর মতে এই ভোট মমতার, তাই তৃণমূল শক্ত মাটি তৈরি করতে সফল। 

 

৩। তৃণমূলকে টুকরো টুকরো করে ফেলা 

বিজেপির মূল লক্ষ্য ছিল তৃণমূলকে ভেঙ্গে টুকরো করে ফেলা। বিজেপি তাতে চেষ্টার কসুর করেনি। পিকে স্বীকার করে নেন, ৩০ জন এমপি, এমএলএ দল ছাড়লে তা ছোট ব্যাপার নয়। কিন্তু বাস্তব হল, ৩০ জন জন প্রতিনিধিকে ভাঙ্গিয়ে নিয়েও তৃণমূলকে ছারখার করতে ব্যর্থ অমিত শাহ। পিকে বলছেন, তৃণমূল ভেঙ্গে না গেলে বিজেপির পক্ষে সুবিধে করা অসম্ভব। আর তাই ৩০ জন জনপ্রতিনিধি দল ছাড়লেও তৃণমূলের কোনও সমস্যা হয়নি। প্রশান্ত কিশোরের মতে, এতে বরং খারাপ ভাবমূর্তি সম্পন্ন নেতাদের তাড়ানো গেছে। এতে মানুষের ক্ষোভ খানিকটা হলেও প্রশমিত হয়েছে। তৃণমূলও দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকজনকে সামনে আনতে পেরেছে, বলছেন পিকে। 

 

৪। তপসিলি জাতি 

নমশূদ্র এবং মতুয়া জনগোষ্ঠী এবারের ভোটে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিশোরের মতে সিএএ দিয়ে তাদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি লোকসভা উতরে গেলেও একই কারণে এবার তাদের সামনে সমস্যার পাহাড়। কারণ নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি এখনও বিশ বাও জলে। পিকে বলছেন, উপনির্বাচনে স্পষ্ট বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে চিড়ে ভিজছে না। আইপ্যাক কর্ণধার মনে করেন, সেদিকে খেয়াল করেই বিজেপি সিএএ নিয়ে তাড়াহুড়োর পথ ছেড়েছে। প্রশান্ত কিশোরের কটাক্ষ, এই ফল দেখার পরেই ক্রোনলজি নিয়ে শাহের মুখে কুলুপ। 

 

৫। মোদীর জনপ্রিয়তা 

ভারতে ভোটের ক্ষেত্রে ইদানীং মোদীর জনপ্রিয়তা অন্যতম বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু বাংলায় সেটা খাটে না। কারণ এখানে মোদীর সম পর্যায়ের একজন নেত্রী আছেন। দেশের সাপেক্ষে মোদী হয়ত দিদির চেয়ে বড় নেতা কিন্তু খেলা তো এবার বাংলার মাটিতে। যেখানে মোদীর চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় মমতা ব্যানার্জি। এর সুফল তৃণমূলের বড় ট্রাম্প কার্ড, বলে মনে করেন পিকে।

সবমিলিয়ে মিডিয়া যতই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিজেপিকে ২০০ আসনের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরুক আদতে তারা ১০০ আসনও পাবে না, দ্বিতীয় দফার ভোটের ঠিক আগে বলে দেন তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। ফের একবার প্রশান্ত কিশোর বলেন, বাংলায় বিজেপিকে ১০০ আসন পেতে হিমশিম খেতে হবে। আর পিকের দাবি না মিললে? মুচকি হেসে পিকে বলেন, বাংলা থেকেই নির্বাচনী পরামর্শদাতার কাজকে বিদায় জানাব।

Comments are closed.