দুইয়ের বেশি সন্তান নয়, ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সংবিধান সংশোধনের আর্জি জানিয়ে রাজ্যসভায় এই মর্মে বিল পেশ করলেন শিবসেনার সাংসদ অনিল দেশাই। বিলে দাবি, পরিবার ছোট রাখার উৎসাহ দিতে করছাড়, স্কুলে ভর্তি সংক্রান্ত সুবিধা সহ নানা সামাজিক প্রকল্পের সুযোগ দেওয়া উচিত সরকারের। তেমনই জনসংখ্যা নীতি না মানলে সেই পরিবারের উপর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হোক।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভায় পেশ করা প্রাইভেট বিলে শিবসেনার সাংসদ সওয়াল করেন, দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিবার পরিকল্পনার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং সংবিধানের ‘৪৭ এ’ ধারায় ছোট পরিবারকে আদর্শ হিসেবে বলা হচ্ছে। তাই দুইয়ের বেশি সন্তান না নেওয়ার জন্য আইন কঠোর করা উচিত বলে বিলে জানান উদ্ধব ঠাকরের দলের সাংসদ।
সংশ্লিষ্ট ‘প্রাইভেট মেম্বার বিল’-এ বলা হয়েছে, আগামী প্রজন্মকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে শুধুমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য। দেশের জনবিস্ফোরণ সম্পর্কে আমাদের এখনই সজাগ হতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, দু’ তরফকেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রকল্প ও কর্মসূচি নিতে হবে।
কোনও সাংসদ যদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদে না থাকেন, তাঁকে সংবিধানের ভাষায় বলা হয় প্রাইভেট মেম্বার। শুক্রবার সংসদের দ্বিতীয় পর্যায়ের অধিবেশনে এই প্রাইভেট বিল পেশের সুযোগ দেওয়া হয়।
শিবসেনার সাংসদ অনিল দেশাই তাঁর প্রাইভেট মেম্বার বিল আনার কারণ জানিয়ে বলেন, কোনও দেশের আর্থিক বৃদ্ধি তার জনসংখ্যার সঙ্গে গভীর সম্পর্কযুক্ত। জনবিস্ফোরণের জন্য আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব হবে। জল, বাতাস, জমি, কাঠ সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ হচ্ছে অধিক জনসংখ্যার কারণে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমাদের কঠোরভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রাইভেটে বিলে জানানো হয়, এই মুহূর্তে দেশের জনসংখ্যা ১২৫ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। গত ৪০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে এবং এভাবে চলল আগামী কয়েক দশকে চিনকেও জনসংখ্যায় ছাপিয়ে যাবে ভারত। এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান হল এমন তিনটি দেশ, যাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। দেশের বর্তমান বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.০২ শতাংশ। ভারতে জাতীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর মধ্যে আমরা দ্বিতীয় জনবহুল দেশ।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ক্রমহ্রাসমান প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভবিষৎ প্রজন্মের স্বার্থে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করা হয়েছে বিলে। সেখানে বলা হয়, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উৎসাহ দিতে ছোট পরিবারগুলিকে করছাড়, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে আলাদা সুবিধা দেওয়া উচিত। অন্যদিকে যারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি মানছে না, সেই পরিবারগুলির উপর অতিরিক্ত কর সহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে হবে।
Comments are closed.