ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: ১৯৮৪ দাঙ্গায় কংগ্রেসকে ক্লিনচিট দিয়ে রাজ্যসভায় সাংসদ হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র
১৯৮৪ শিখ বিরোধী দাঙ্গায় কংগ্রেসকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র। অবসরের পরে রাজ্যসভার কংগ্রেসের সাংসদ হন। সেই রাস্তা বেয়েই কি বর্তমান সরকার পক্ষের সাংসদ মনোনীত হলেন অযোধ্যা মামলায় রায় দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ?
অবসরের ঠিক আগে অযোধ্যা মামলায় রায় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তার আগে রাফাল মামলায় মোদী সরকারকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন। অবসরের পর তাঁকেই রাজ্যসভার সাংসদ পদে মনোনীত করার খবরে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঢেউ। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গগৈ অবশ্য মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনি কেন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তা সাংসদ পদে শপথ নেওয়ার পরে জানাবেন।
তিনিই প্রথম অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি যাঁকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করলেন সাংসদ পদে। তবে তিনিই প্রথম প্রধান বিচারপতি নন, যিনি সাংসদ হচ্ছেন। এর আগেও সুপ্রিম কোর্টের এক প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র অবসর গ্রহণের পর সাংসদ হয়েছিলেন। সাংসদ হওয়ার সময় তাঁকেও শুনতে হয়েছিল, কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্কের’ খাতিরেই এই পুরস্কার।
১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হওয়ার পর প্রায় একই রকম শোরগোল তৈরি হয়েছিল রঙ্গনাথ মিশ্রকে নিয়ে। ১৯৮৪ সালে শিখ বিরোধী দাঙ্গার তদন্তে যে মিশ্র কমিশন গঠিত হয়, তার একমাত্র সদস্য ছিলেন তিনি। যে কমিশনের রিপোর্টকে পক্ষপাতিত্বমূলক বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারতীয় সেনার প্রাক্তন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ জগজিৎ সিংহ অরোরা। তাঁর অভিযোগ ছিল, শিখ বিরোধী দাঙ্গায় জড়িত থাকা সত্ত্বেও ১৯ জন কংগ্রেসের নেতা ও সদস্য ক্লিনচিট পেয়ে যান কমিশনের কাছে। এমনকী বিচারপতি ভি এম তারকুণ্ডে, যাঁকে ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনের জনক বলা হয়, তিনিও মিশ্র কমিশনের এই তদন্তকে একপক্ষের দিকে ঘেঁষা বলে বর্ণনা করেছিলেন।
১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন রঙ্গনাথ মিশ্র। অবসরগ্রহণের পর ১৯৯৩ সালে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হন। তারপর ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের সাংসদ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের ২১ তম প্রধান বিচারপতি।
মজার ব্যাপার, তাঁর ভাইপোও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। যাঁর নাম বিচারপতি দীপক মিশ্র। ২০১৮ সালে জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও আরও তিন বিচারপতি নজিরবিহীনভাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের অফিসের সঙ্গে সরকার মহলের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এই চার বিচারপতি।
সেই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এই সাংসদ পদ নেওয়ায় তাঁরই এক প্রাক্তন সহকর্মী বিচারপতি মদন বি লকুড় কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
Comments are closed.