এই মুহুর্তে দেশের যা অবস্থা তাতে সময় এসেছে পক্ষ নেওয়ার। সরসরি বিজেপিকে হারানোর ডাক দেওয়ার সময় এসেছে। আর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং মৌলবাদকে ঠেকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে শক্ত করা ছাড়া আর কোনও বিকল্পও নেই। তাই পক্ষ একটা নিতেই হবে।
আমাদের রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে সমস্ত অবিজেপি মানুষকে এক প্ল্য়াটফর্মে নিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেতার পথকে মসৃণ করতে হবে। এবং এই ইস্যুতে বাংলার সিপিএমকেও এবার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তারা বিরোধী ভোট ভাগের দায় নেবে নাকি তৃণমূলের সঙ্গে চলবে, কোনটা বাছবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট? হায়দরাবাদে হওয়া পার্টি কংগ্রেসে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে ২০টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে সিপিএম। বাকি আসনগুলিতে শক্তিশালী বিরোধীদের সমর্থন করার যে ঘোষণা তারা করেছে, তা দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিজেপিকে ঠেকাতে যদি কর্ণাটকে এই অলিখিত বোঝাপড়া হতে পারে কংগ্রেসের সঙ্গে, তবে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে না হাঁটা প্রকারন্তরে বিজেপির হাতকেই শক্ত করা।
তামিলনাড়ুতে স্থানীয় ভাষা ব্য়বহারের অধিকার নিয়ে সিপিএম সোচ্চার, অথচ এখানে আমি জয় বাংলা স্লোগান দিলেই প্রাদেশিক? আসলে বাংলা লাইনকে, বাংলার সেন্টিমেন্টকে কোনও কালেই গুরুত্ব দেয়নি সিপিএম পলিটব্য়ুরো। তা জ্য়োতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রশ্ন হোক বা এখনকার অবস্থা।
শেষ পার্টি কংগ্রেসেও দেখা গিয়েছে সিপিএমের সদস্য় সংখ্যা কমেছে ৬০ হাজার। এমন ভাবার নিশ্চই কোনও কারণ নেই, এঁরা সবাই সন্ত্রাসের কারণে তাঁদের সদস্য়পদ রিনিউ করাননি। আসলে সিপিএমের অবাস্তব ও দ্বিচারিতার নীতির জন্যই এঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মানুষ সিপিএমকে আর বিশ্বাস করছেন না। আলিমুদ্দিনের গুটিকয়েক নেতার পছন্দ বা অপছন্দে যে কারওর আর কিছু এসে যাচ্ছে না সেটা বোঝারও সময় এসেছে। বাংলায় বিজেপির কাছে কার্যত আত্মসমর্পণ করেছেন সিপিএমের নেতারা। এই একই ঘটনা আমরা সম্প্রতি ত্রিপুরাতেও দেখেছি। এখানেও বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম নেতা, কর্মীরা বসছেন বিজেপি নেতাদের সঙ্গে, ভাবছেন কেউ জানবেন না। ভাবছেন, এই মুহূর্তে বিজেপির হাত ধরে তৃণমূলকে সবক শেখাবেন। কিন্তু এর ফল হবে বাংলার জন্য মারাত্মক। অন্য়দিকে, মাওবাদীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন রাজ্য় সিপিএম নেতৃত্বের একটা অংশ।
বিজেপি বিরোধী যে প্রতিরোধ গোটা দেশে গড়ে উঠছে, এই মুহূর্তে তার কেন্দ্রে নিঃসন্দেহে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই জাতীয় রাজনীতিতে বাংলাকে গুরুত্ব দেওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে এখন। তৃণমূল নেত্রী যে আগামী দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন না, কে বলতে পারেন? তাই তাঁর হাতকে শক্ত করতে খুব তাড়াতাড়িই একটি প্ল্য়াটফর্ম তৈরি করতে চলেছি আমরা। সেই প্ল্যাটফর্ম পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। সাংবাদিক বৈঠক করে আমরা জানাবো, কবে, কীভাবে কাজ শুরু করবে এই প্ল্যাটফর্ম।
কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলার সমস্ত মানুষের কাছে মৌলিক প্রশ্ন, বিজেপিকে রোখা। যে কাজের জন্য গোটা দেশ এখন তাকিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিকে।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত।)