রোবট বিপ্লব। অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার সামনে মানুষের তৈরি রোবটই সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসতে চলেছে। তাহলে কি বিশেষ বিশেষ পেশা ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজন কার্যত ফুরিয়ে আসছে? অক্সফোর্ড ইকনমিক্সের রিপোর্ট বলছে সাম্প্রতিক গবেষণায় অটোমেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি স্টোরেজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিংয়ের এমন অগ্রগতি হয়েছে যে এক কালে যে কাজে মানুষের বিকল্প ছিল না, মুহূর্তে তা হয়ে যেতে পারে রোবট নিয়ন্ত্রিত। এর ফলে চরম বিপদের মধ্যে পড়তে পারেন ওই সব পেশার কর্মীরা। রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে অন্তত ২ কোটি মানুষ কাজ হারাবেন রোবটের কাছে।
কোন কোন পেশায় রোবট বিপ্লবের সম্ভাবনা?
১. ফ্রন্ট ডেস্ক ও টেলি কলার
রোবটকে দিয়ে ফোন ধরা কিংবা ফোনের উত্তর দেওয়া এখন জলভাত। কিন্তু জানেন কি, যে কোনও অফিসের ফ্রন্ট ডেস্ক বা কল সেন্টারের টেলি কলারের কাজও অনায়াসে করে ফেলছে রোবট! টোকিওর একটি হোটেলে আপনি পাবেন সম্পূর্ণ বোরট চালিত পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ।
২. বস্ত্র শিল্প
ভারতের বস্ত্র শিল্প মূলত শ্রম নিবিড়। ইকনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বেগে যে ক্ষেত্র রোবটিক্সের দিকে ঝুঁকছে, তার মধ্যে অন্যতম ভারতের বস্ত্র শিল্প। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল স্তরের কর্মীরা। কারণ তাঁরা কাজের মানোন্নয়নে অপারগ। ফলে রোবট চালানোর কিংবা রোবটে তথ্য ভরার কাজেও তাঁদের জায়গা হবে না।
৩. ভারতের ক্ষেত্রে কী প্রভাব?
ভারতের পরিষেবা নির্ভর অর্থনীতি বর্তমানে উৎপাদনে জোর দিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে শ্রমের বিভাজন এখনও অস্পষ্ট। যা অসংগঠিত ক্ষেত্রে হাহাকার ফেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ মেশিনকে দিয়ে নির্ভুলভাবে দীর্ঘক্ষণ কাজ করানো যায়। যা মানুষের ক্ষেত্রে কার্যত অসম্ভব। ফলে প্রথম ধাপেই নিচুতলায় অসংখ্য মানুষের কাজ পলকে করে দেবে একটি মাত্র মেশিন।
৪. ডাক্তার ও স্বাস্থ্য পরিষেবা
করোনা অতিমারির সময় সংক্রমিতের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেরাও সংক্রমিত হয়েছেন কত স্বাস্থ্য কর্মী বা ডাক্তার। এই কাজ যদি রোবট করে দেয় তাহলে সংক্রমণের প্রশ্ন থাকছে না। সম্প্রতি চিনের একটি হাসপাতাল এই বিপদ থেকে বাঁচতে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সহ পুরো রোবট নিয়ন্ত্রিত পরিকাঠামো চালাচ্ছে। আগামীদিনে কি এটাই দস্তুর হতে চলেছে? রোবট দিয়ে বিপজ্জনক সাফাইয়ের কাজও সাফল্যের সঙ্গে হচ্ছে। ফলে কত লোকের জীবিকা প্রশ্নের মুখে সহজেই অনুমেয়।
সবমিলিয়ে মানুষের তৈরি রোবটই এখন সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ মানুষের কাছে।
Comments are closed.