স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের ১ কোটি শ্রমিক, উপভোক্তার সংখ্যায় আয়ুষ্মান ভারতকে টপকে যাওয়ার দাবি নবান্নের

কেন্দ্রের স্বাস্থ্যসুরক্ষা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত এর মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি পেরিয়েছে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও স্বাস্থ্য প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর উপভোক্তার সংখ্যাও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। রাজ্যের উপভোক্তার সংখ্যা কেন্দ্রের উপভোক্তার মোট সংখ্যার চেয়েও বেশি বলে দাবি করেছে নবান্ন।

গত কয়েক বছরে রাজ্যের শ্রমিক কল্যাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জনমুখী প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যের অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রায় এক কোটি শ্রমিককে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা দিয়েছে রাজ্য সরকার। একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প গ্রহণের রেকর্ড সম্ভবত দেশের আর কোনও রাজ্যেই নেই।

রাজ্য শ্রম দফতর এ ব্যাপারে কাজ এগিয়েও নিয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই শ্রমিক কল্যাণ সংক্রান্ত তিনটি সরকারি বোর্ডের বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ার কথা। যার ফলে সরকারি ও আধা সরকারি সহ অন্যান্য বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক বা তাদের পরিবারের সদস্যরাও বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবেন। এ জন্য একটি টাকাও তাঁদের নিজেদের খরচ করতে হবে না।

প্রসঙ্গত, অসংগঠিত ক্ষেত্রের নানা সুবিধা নিয়ে বাম জমানাতেও সামাজিক সুরক্ষার কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়। তৃণমূল জমানায় বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ ভাবেই ২০১৭ সালে সব ক্ষেত্রের অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে চালু করা হয় সামাজিক সুরক্ষা যোজনা। বর্তমানে যোজনার সব খরচই জোগায় রাজ্য সরকার। শ্রম দফতর সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে বর্তমানে নথিভুক্ত ১ কোটি ২৭ লক্ষ শ্রমিক ও তাদের পরিবার। চিকিৎসা খরচ বাবদ বছরে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন তাঁরা। কিন্তু চিকিৎসার খরচ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষা আরও মজবুত করা দরকার বলে মনে করেছে রাজ্য সরকার। সেই ভাবনা থেকেই অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদেরও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনার তোড়জোড় শুরু করেন মমতা। করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে শ্রমিক দুর্দশা দেখে দ্রুত প্রকল্প কার্যকর করার নির্দেশ দেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীকে।

লকডাউনের কারণে পরিযায়ী ও অসংগঠিত শ্রমিকদের নিয়ে নানা অভিযোগ করেছে বিরোধী শিবির। বারবার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প জোর করে চালু করতে দেয়নি রাজ্য সরকার। সেই প্রেক্ষিতে নবান্নের এই পদক্ষেপকে জুতসই বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে শুধু স্বাস্থ্যসাথী নয়, অসংগঠিত শ্রমিকদের সন্তানদের একাদশ শ্রেণী থেকে পড়ার খরচ বাবদ চালু থাকা প্রকল্পেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে চাইছে শ্রম দফতর।

Comments are closed.