২০০৮ সালের কি পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে ২০১৯ এ ? ফের কি আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে এক চরম আর্থিক মন্দার? এমনই কিন্তু ইঙ্গিত মিলছে মার্কসবাদী সংগঠন ‘সোশ্যালিস্ট অ্যাপিল’এর পত্রিকায় ৪ জানুয়ারি, শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রবন্ধে। এই প্রবন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে ভয়াবহ পরিস্থতি তৈরি হয়েছিল, তা থেকেও খারাপ দিন আসছে আগামী দু’তিন বছরে।
ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আর্থিক মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। তার প্রভাব যে সরাসরি ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করছে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে তা নিয়েও। পৃথিবীজুড়ে আর্থিক মন্দার এই ইঙ্গিতকে সত্য বলে মন্তব্য করে বিখ্যাত মার্কসবাদী পত্রিকা ‘সোশ্যালিস্ট অ্যাপিল’- এ একটি প্রবন্ধ লিখেছেন অর্থনীতিবিদ রব সিওয়েল। শুক্রবার এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে এক বড় আর্থিক মন্দা আসতে চলেছে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।
রব সিওয়েল লিখেছেন, বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক মন্দা শুরু হয়েছে, সম্প্রতি ফ্রান্সের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম, বেকারত্ব-সব কিছু মিলিয়ে জনমানসে যে তীব্র ক্ষোভ, তার প্রকাশ ঘটেছে ইমানুয়েল মাকরেঁর সরকারের বিরুদ্ধে। ওয়েস্টার্ন এলিট শ্রেণীর প্রতিনিধি ইমানুয়েল মাকরেঁর ‘উদারনৈতিক’ রাজনীতি যে ফ্রান্সের মানুষকে খুশি করতে পারেনি তা পরিষ্কার। সে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বিশ্বাস হয় বাম নয়তো ডানপন্থী। ‘সেন্টার’ রাজনৈতিক বিশ্বাস ক্রমশ মুছে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন রব। তাঁর কথায়, এক নতুন রাজনৈতিক বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। এঁদের ‘নিউ নর্মাল’ বলে উল্লেখ করেছেন রব।
ফ্রান্সের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের মতো গণআন্দোলন ব্রিটেনেও ঘটতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ব্রিটেনের বিদেশ সচিব জেরিমি হান্ট। এই গণআন্দোলনের ভাইরাস যে কোনও সময় আক্রমণ করতে পারে ব্রিটেনবাসীকে। ‘ব্রেক্সিট’ হতে পারে একটি কারণ।
শুধু ইউরোপ মহাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে একটা বিশাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুঁজিবাদ তার শেষ সীমানায় পৌঁছে গিয়েছে, পূর্বের ন্যায় উৎপাদনশীল ক্ষমতা বাড়ানোর আর কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে ইউরোপীয় ব্যাঙ্কগুলি ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রব সিওয়েল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থিক দুরাবস্থাকে ছাপিয়ে যেতে চলেছে সামনের কয়েকটি বছর।
বছর খানেক আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছুটা হলেও আর্থিক বৃদ্ধি ভাল ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের অদূরদর্শিতার ফলে বিপন্ন হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি।
রবের মতে, প্রত্যেক দশ বছর পর বিশ্ব বাজারে আর্থিক মন্দার আশঙ্কা দেখা যায়, দুর্ভাগ্যক্রমে শেষ আর্থিক সংকটের এক দশক পার হয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সালের থেকেও ভয়াবহ আর্থিক সংকট শুরু হতে চলেছে। দেনার পাহাড়ে চাপা পড়তে চলেছে আর্থিক সমৃদ্ধশালী দেশগুলি। হাতে টাকা থাকলেও বিনিয়োগের রাস্তাগুলি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।
কেইন্সিয়ান অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আর্থিক মন্দার বড় কারণ হল চাহিদার অভাব। যান্ত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন হয়তো অল্প সময়ে হচ্ছে। কিন্তু কাজ কমছে সাধারণ মানুষের। কাজের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে অসমর্থ হচ্ছে দেশগুলি। এই বিশ্বজুড়ে মন্দাকে পুঁজিবাদী শক্তির ফল বলে মনে করছেন রব সিওয়েল। পাশাপাশি, ব্রিটেনের ব্রেক্সিট ইস্যু, আমেরিকায় ডোনাল্ডের ট্রাম্পের ভুল নীতি, ফ্রান্সের গণআন্দোলন এক গভীর সংকট তৈরি করছে। ফলতঃ, মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাদী বিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে ধীরে ধীরে।
Comments are closed.