ইউপি’তে আদিবাসীদের ওপর নির্বিচারে চালানো গুলিতে মৃত বেড়ে ১০, ‘পরের বার খালি হাতে ফিরব না’, হুমকি দিয়েছিলেন অভিযুক্ত প্রধান
উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র জেলায় প্রধানের গুণ্ডা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবৃষ্টিতে গণহত্যার ঘটনায় শিউরে উঠেছে সারা দেশ। দুষ্কৃতী বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ১০ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। কিন্তু কীভাবে ঘটল এমন মর্মান্তিক ঘটনা?
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে জানা যাচ্ছে, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে গুলিবর্ষণ করে প্রধানের বাহিনী। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশকে বারবার জানানো সত্ত্বেও গুলি চালনার ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় তারা।
ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার সকালে। আর পাঁচটা দিনের মতোই সোনভদ্র জেলার উভা গ্রামের বাসিন্দারা সকাল সকাল নেমে পড়েছিলেন কৃষিকাজে। সকাল ১১ টা নাগাদ হঠাৎ খবর আসে ৩০-৩২ টি ট্র্যাক্টরে শ’দুয়েক লোক আসছেন গ্রামের দিকে। তারা সকলেই সশস্ত্র, নেতৃত্বে প্রধান যজ্ঞদত্ত ভুরিয়া। এই খবর শোনার পরই প্রমাদ গোনেন গ্রামবাসীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ততক্ষণে ধুলো উড়িয়ে গ্রামে ঢুকে পড়েছে প্রধানের ট্র্যাক্টর-বাহিনী, হাতে লাঠি-বল্লম-রাইফেল-বন্দুক। গ্রামের পুরুষরা গ্রামের রাস্তায় সমবেতভাবে দাঁড়িয়ে প্রধানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে গ্রামের মহিলারা ছিলেন খেত পাহারায়। কিন্তু জমি দখলে মরিয়া প্রধান যজ্ঞদত্ত ভুরিয়া গ্রামবাসীদের কথায় কর্ণপাত না করে, বাহিনীকে নির্দেশ দেন খেত দখলের। প্রয়োজনে গুলি মেরে বাধা সরিয়ে দেওয়ারও স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় গুণ্ডা বাহিনীকে। ৩০ টি ট্র্যাক্টর সরাসরি নেমে পড়ে চাষের খেতে। গ্রামের মহিলারা তখনও জমিতেই দাঁড়িয়ে। পুরুষরা ট্র্যাক্টর বাহিনীকে আটকানোর চেষ্টা করলে শুরু হয়ে যায় গুলিবর্ষণ। চাষের খেতেই একের পর এক আদিবাসী নারী-পুরুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়তে থাকেন। ট্র্যাক্টরের বিশাল চাকায় গুড়িয়ে যেতে থাকে গ্রামবাসীদের খেতের ফসল। জমি লুঠ ঠেকাতে মরিয়া আদিবাসীরা হাতের লাঠি, কোদাল নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রধানের বাহিনীর উপর। কিন্তু রাইফেল-বন্দুকের সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি তাঁরা। প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে নির্বিচার গুলিবর্ষণ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৩ মহিলা সহ ৭ আদিবাসী মানুষের। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও ৩ গ্রামবাসীর।
গ্রামবাসীরা বলছেন, এই প্রথম নয়, এর আগেও দু’বার জমি দখল করার চেষ্টা করেছিলেন প্রধান যজ্ঞদত্ত ভুরিয়া। কিন্তু সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সে যাত্রা নিরস্ত হলেও বুধবার তৈরি হয়েই এসেছিল ট্র্যাক্টর বাহিনী। গত অক্টোবরে শেষবার যখন জমি দখলে বিফল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন যজ্ঞদত্ত ভুরিয়া, বলে গিয়েছিলেন, পরের এসে আর খালি হাতে ফিরব না। গ্রামবাসীরা সেই হুঁশিয়ারি ভোলেননি। তাই বুধবার সকালে ট্র্যাক্টর বোঝাই করে সশস্ত্র বাহিনী গ্রামে ঢোকার পরই প্রধানের উদ্দেশ্য বুঝতে দেরি হয়নি গ্রামের আদিবাসী বাসিন্দাদের।
পুলিশ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত যজ্ঞদত্ত ভুরিয়া সহ ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে সোনভদ্র সরকারি হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কয়েকজন গ্রামবাসীকে পাঠানো হয়েছে বেনারসের হাসপাতালে। ঘটনায় প্রধান সহ পরিবারের ৬ জনকে মুখ্য অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশ। সোনভদ্রের পুলিশ সুপার সলমনতাজ জাফরতাজ প্যাটেল জানিয়েছেন, পুলিশ গুলি চালনায় ব্যবহার হওয়া দুটি লাইসেন্সড বন্দুক উদ্ধার করেছে। বাকি বন্দুক ও রাইফেলও দ্রুত উদ্ধার করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে এই ঘটনা যোগী রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিরোধীদের প্রবল আক্রমণের মুখে যোগী সরকার ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে। যদিও বিরোধীরা বিজেপি সরকারের সেই আশ্বাস মানতে নারাজ। মৃত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবারই উভা গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যদিও তাঁকে ঘটনাস্থলে যেতে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করে কংগ্রেস
Comments are closed.