দিঘার সমুদ্র থেকে যেমন দু’কলসি জল নিলে কিছু হয় না, তেমনি তৃণমূল থেকে কেউ গেলে দলের কিছু যাবে-আসবে না। বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শুভেন্দুকে ক্ষমা করবে না মানুষ। মমতার সঙ্গে নয়, মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন তিনি। ঠিক এভাবেই অধিকারী গড় কাঁথিতে দাঁড়িয়ে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ শানালেন সৌগত রায় ও ফিরহাদ হাকিম।
শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাঁথির এই সভা রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অধিকারী পরিবারের অনুপস্থিতেই তৃণমূলের সভায় মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। শুভেন্দু দল ছাড়লেও তৃণমূলের যে আদতে কোনও ক্ষতি হয়নি, মিছিল ও সভা থেকে আগাগোড়া সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে, শুভেন্দুর অধিকারীকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ শানালেন সৌগত রায় ও ফিরহাদ হাকিম।
সৌগতের কথায়, যাঁরা তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের কথা বলছেন, যাঁরা সতীশ সামন্তর কথা বলছেন, তাঁরাই আজ গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের দলে যোগ দিয়েছেন। ফিরহাদের কটাক্ষ, অমিত শাহকে শুভেন্দুর প্রণাম করার দৃশ্য দেখার আগে আমার মৃত্যু হল না কেন! তাঁর কথায়, লজ্জা লাগে, যখন শুভেন্দুকে আমার সহকর্মী বলতে হয়। আবেগতাড়িত ফিরহাদের মন্তব্য, যে মাটি থেকে ক্ষুদিরামের মতো ছেলে, মাতঙ্গিনী হাজরার মতো মা ছিলেন সেই মাটির কাছে ক্ষমা চাইছি শুভেন্দুর জন্য। তৃণমূলত্যাগী নেতার বিরুদ্ধে তাঁর চাঁচাছোলা আক্রমণ, জেলে যাওয়ার ভয়ে নাকি ধান্দাবাজি কীসের জন্য বিজেপিতে গেলেন শুভেন্দু? তিনি আরও বলেন, শুভেন্দু চলে যাওয়ায় খুশিই হয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা।
শুভেন্দুকে পদলোভী বলে তীব্র আক্রমণ শানান পদত্যাগী নেতার মধ্যস্থতকারী সৌগত রায়। তিনি বলেন, সারা দেশে যে বিজেপির বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন হচ্ছে, তাদের দলে যোগ দিতে লজ্জা করল না নন্দীগ্রাম আন্দোলন করা শুভেন্দুর? এদিন বারবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তিনি তুলনা টানেন রামনগরের আর এক তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির। অধিকারী পরিবারের সঙ্গে অখিল গিরির ঠান্ডা সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। সেই অখিল গিরিকে প্রশংসায় ভরিয়ে একের পর এক আক্রমণ শানানো হয় শুভেন্দুর উদ্দেশে। ফিরহাদের কথায়, পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলা শুভেন্দু আজ শুভেন্দুই হতেন না যদি না তিনি শিশির অধিকারীর ছেলে হতেন। শুভেন্দুর লিফটেই উঠে নেতা হয়েছেন বলে কটাক্ষ করেন তিনি। অন্যদিকে সৌগত বলেন, শুভেন্দুকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি, শিশিরবাবুকে তাঁর আগে চেনা।
কিন্তু সেই শুভেন্দু আজ মিরজাফর, জগৎ শেঠদের মতো বিশ্বাসঘাতকদের দলে নাম লেখালেন, এটাই দুঃখের বিষয়।মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবে না।
মঙ্গলবার কেতুগ্রামের সভায় দিলীপ ঘোষকে পাশে নিয়ে নাম না করে অভিষেক ব্যানার্জিকে নিশানা করেছিলেন শুভেন্দু। সেই প্রসঙ্গ টেবে সৌগতর খোঁচা, অভিষেক, প্রশান্ত কিশোর ও শুভেন্দুকে এক সঙ্গে কথা বলিয়েছিলাম। তখন শুভেন্দু বলেছিলেন অভিষেকের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই, এখন দিলীপের ঠেলায় পড়ে তাঁকে বলতে হচ্ছে ‘ভাইপো হঠাও’।
Comments are closed.