জিম করতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন সৌরভ গাঙ্গুলি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার ডাক্তার দেবী শেঠি জানালেন, সৌরভ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। ইচ্ছে হলে যাত্রী বিমান ওড়াতে পারেন, বলেন ডাক্তার শেঠি। এই আবহে সবচেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে একটি প্রশ্ন, তা হল দাদার আচমকা অসুস্থতা বঙ্গ বিজেপির কাছে কত বড়ো ধাক্কা? আদৌ কি এটা বিজেপির কাছে কোনওরকম ধাক্কা?
২০২১ সালে বাংলা দখলে মরিয়া বিজেপি। কিন্তু মমতা ব্যানার্জিকে টক্কর দেওয়ার মতো ওজনদার মুখ তাঁদের নেই। ২০১৯ সালের লোকসভায় দুর্দান্ত রেজাল্টের পর থেকেই এই জল্পনা অক্সিজেন পেয়েছিল যে দাদাকে দিদির বিরুদ্ধে প্রজেক্ট করতে চন মোদী-শাহ। কিন্তু আজ পর্যন্ত সৌরভ এনিয়ে কিছুই বলেননি। আবার জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন এমন খবরও আসেনি। স্বভাবতই সৌরভও জল মাপছেন বলে মনে করেছিলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এই প্রেক্ষাপটে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হন মহারাজ। একটি স্টেন্ট বসেছে মহারাজের বুকে। ক্রমেই সুস্থতার পথে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে কি সৌরভের পক্ষে নেমে পড়া আদৌ সম্ভব?
কিন্তু কেন উঠছে এই প্রশ্ন?
কিছুদিন আগেই রাজভবনে গিয়ে ঘণ্টা দুয়েক সময় কাটিয়ে এসেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। রাজনীতি নিয়ে কথা হল? দাদার জবাব ছিল জগদীপ ধনখড় কখনও ইডেন দেখেননি, তাই আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলাম। এর মধ্যে অন্য কিছু খোঁজা ঠিক না। সেই মোলাকাতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই সৌরভকেই দেখা গিয়েছিল দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে মঞ্চে। স্বভাবতই তাতে জল্পনায় ঘি পড়ে। বাংলার দিদিকে চ্যালেঞ্জ করতে কি তাহলে বিজেপি দাদাকেই বেছে নিচ্ছে? সৌরভ গাঙ্গুলি কি নিজে রাজি পুরোদস্তুর রাজনীতির ময়দানে ঢুকে পড়তে? সৌরভের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য তাঁকে রাজনীতিতে না নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন। দাদা মানলেন কি?
এই প্রশ্ন যখন ক্রমেই ডালপালা মেলছে ঠিক তখন জানা গেল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। আর সৌরভ হাসপাতালে ভর্তি এই খবর ছড়িয়ে যেতেই আলিপুরের উডল্যান্ডস হয়ে ওঠে রাজনীতির মহামিলন ক্ষেত্র। তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম, সব দলের তাবড় নেতারা হাজির হাসপাতালে। সেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই আবার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন অশোক ভট্টাচার্য। বলেন, সৌরভের ওপর রাজনৈতিক চাপ ছিল। এটা অনভিপ্রেত। কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য রাজনৈতিকভাবে ওঁকে ব্যবহার করছে।
তারপর থেকেই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে, লর্ডসে অভিষেক টেস্টে শতরানকারী মহারাজের অসুস্থতার আদত কারণ কি তাঁকে রাজনীতিতে নামতে চাপ দেওয়ার পরিণতি? যদি তাই হয় তাহলে কে তাঁকে চাপ দিচ্ছেন?
ডাক্তার দেবী শেঠি জানাচ্ছেন, সৌরভ আবার নিজের রুটিনে ফিরে যাবেন। কিন্তু তিনি রাজনীতিতে নামার মতো ফিট হবেন কি? এই প্রশ্নের উত্তর দেননি স্বনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। মুচকি হেসে কেবল জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তটা বরং সৌরভ আর আপনাদের উপর ছাড়লাম।
Comments are closed.