নিউটাউনে আইসিএসই স্কুল করার জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া ২ একর জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। যা রাজ্য রাজনীতিতে জন্ম দিল একাধিক জল্পনার। বেহালার মহারাজের জমি ফেরানোর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে আসছে বিবিধ রাজনৈতিক সমীকরণ এবং ভবিষ্যৎ বাধ্যবাধকতার পূর্বাভাসের কথা। জল্পনায় জল ঢালতে রবিবারই কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করেই বিধানসভায় লড়বে বিজেপি। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত মধ্যপ্রদেশের নেতার এই উদ্যোগ সত্ত্বেও জল্পনা স্তিমিত হয়েছে কি, প্রশ্ন উঠছে।
রাজ্যের সদর দফতর তখন রাইটার্স বিল্ডিং। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সৌরভ গাঙ্গুলির ‘গাঙ্গুলি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’কে সল্টলেকে জমি দেয় নগরোন্নয়ন দফতর। মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য নিজে উদ্যোগী হয়ে জমি তুলে দেন সৌরভের হাতে। কিন্তু ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। যে মামলায় পরবর্তীতে হেরে যান সৌরভ। জমি ফিরিয়ে দিতে হয় তাঁকে। তারপর রাজ্য রাজনীতিতে ঘটেছে পালাবদল। রাইটার্স থেকে সদর দফতর সরেছে নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূল আমলেও সৌরভকে নিউটাউন সিটি সেন্টার টুয়ের পাশে ২ একর জমি দেয় রাজ্য সরকার। সেখানে আইসিএসই অনুমোদিত দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল করতে চেয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু হিডকোর দেওয়া সেই জমিতেও মামলা হয়। যা এখনও চলছে। এবার বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এই জমিটিও রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নবান্ন সূত্রের খবর, ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জমি ফেরানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা বলেছেন সৌরভ। সৌরভের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের কোনও পাকিয়ে ওঠা সমীকরণের পূর্বাভাস কিনা তা নিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে।
কেউ বলছেন, সৌরভ গাঙ্গুলি মামলার জাঁতাকলে জড়াতে চান না, তাই মমতা সরকারের দেওয়া জমি ছাড়ার সিদ্ধান্ত। রাজনীতির সম্পর্ক নেই। কিন্তু জমি ফেরতে সৌরভের তৎপরতা ঘটনাকে স্রেফ অরাজনৈতিক বলে দেগে দিতে পারছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। একটি সূত্রের মতে জমি ফেরানোর পিছনে রয়েছে বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিকল্পনা। যাকে ইন্ধন যোগাচ্ছে গত ৫-৬ মাসে ঘটা একের পর এক ঘটনা।
সৌরভের বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময়, যে জল্পনা পাখনা মেলেছিল, জমি ফেরানোর বৃত্তান্তে তা মাঝ গগনে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যে বাংলার মহারাজকে মমতার টক্কর হিসেবে পছন্দ করছেন, তা এখন আর গোপন নেই। সৌরভ গাঙ্গুলির ঘনিষ্ঠ মহল থেকে অবশ্য তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশের জল্পনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মহানাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়ার ঠিক আগে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন সৌরভ। সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, সেই বৈঠকেই গোটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্লু-প্রিন্ট চূড়ান্ত হয়। যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল বিসিসিআই সভাপতি হওয়া। যদিও সৌরভ তা মানতে চাননি। উল্টে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তাঁর পারিবারিক যোগের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু আগাম জমি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নতুন করে জল্পনায় অক্সিজেন যোগালো। তাহলে কি ভবিষ্যতে বিজেপি তাঁকে রাজ্যে দলের মুখ করতে পারে, তখন মমতা সরকারের দেওয়া জমি ইস্যু হতে পারে, এ কথা ভেবে আগেভাগেই বিতর্কের মুখ বন্ধ করলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বময় কর্তা?
বাংলায় দলের মুখ হিসেবে সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বকে বিজেপির পছন্দ করার হাজার একটা কারণ আছে। কিন্তু সৌরভ কি চাইবেন, সরাসরি মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে টক্কর নিতে? সূত্রের খবর, যে মাঠে খেলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা, সেই মাঠে নেমে সৌরভের মতো রাজনীতিতে আনকোড়া মানুষ মমতাকে হারিয়ে দিচ্ছেন, সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে দ্বিধা আছে সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহলেও। কিন্তু পরিস্থিতি যদি সত্যিই অনুকূল হয়, তাহলে সৌরভ সুযোগ নেবেন না কেন, এই মতও আছে। সব মিলিয়ে সৌরভ নিজে সমস্ত বিতর্ক থেকে শত হাত দূরে থাকতে চাইলেও, ঘটনা প্রবাহ তা হতে দিচ্ছে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, পোড় খাওয়া অধিনায়কের মতোই এখন জল মাপছেন দাদা। সময় মতো মুখ খুলবেন। এই জল মাপার প্রক্রিয়ারই একটি ধাপ আগাম জমি ফেরত।
এদিকে মমতার টক্কর নিতে বিজেপির মুখ কে হবে তা নিয়ে ইদানীং বিরাট আলোচনা চলছে। রবিবার কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করেই বিধানসভা ভোটে লড়বে বিজেপি। জিতলে সর্বসম্মতিক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বাছা হবে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন বটে, কিন্তু শনিবার থেকে শুরু হওয়া জমি ফেরত বৃত্তান্তে কিন্তু অন্যরকম ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
Comments are closed.