মুম্বইয়ে আরব সাগর পাড়ে ট্রাইডেন্ট হোটেলে রবিবার বিকেলে বসেছিল ভারতীয় ক্রিকেট পরিচালন সমিতির মহা বৈঠক। বৈঠকের আহ্বায়ক এন শ্রীনিবাসন অতিথিদের আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখেননি। পরিকল্পনা ছিল, তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগী ব্রিজেশ প্যাটেলকে বিসিসিআই সভাপতি করে, বোর্ডের রাশ নিজের হাতেই রাখা। রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত তা ঠিকও ছিল, কিন্তু তারপরই আচমকা বদলে গেল পরিস্থিতি। শেষ মুহূর্তে লড়াইয়ে ঢুকলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিসিসিআই সভাপতি হয়ে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিসিসিআই-এর সচিব হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ। ব্রিজেশকে সন্তুষ্ট থাকতে হল আইপিএল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই। কিন্তু কীভাবে ঘটল এই মহা নাটকীয় পালাবদল?
কোন ম্যাজিকে হারা ম্যাচ জিতে বিসিসিআই সভাপতি হলেন সৌরভ? যদিও নিজে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। কিন্তু তাতে থামছে না জল্পনা। সৌরভের বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার পিছনে বিজেপির প্রভাবশালী মহলের সায় আছে বলে জল্পনা শুরু হয়ে যায় রবিবার রাত থেকেই। এমনকী আলোচনায় উঠে আসে সৌরভের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কের নয়া সমীকরণ। তিনিই কি বাংলায় ভবিষ্যতে বিজেপির মুখ? উঠতে শুরু করে এই প্রশ্ন। যদিও এই সমস্ত দাবি এবং জল্পনা খারিজ করেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু তাতে প্রশ্ন ওঠা ঠেকানো যাচ্ছে না। কারণ, যে মহা নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সৌরভ বিসিসিআইয়ের মসনদে বসছেন তাতে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে সোমবার ট্যুইট করে বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার জন্য সৌরভকে অভিনন্দন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। যেখানে মহা নাটকীয় পালাবদলে মহারাজের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তাতে মুম্বইয়ের বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের আচমকা হাজির হওয়ার বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, মোদী সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক মন্ত্রী নিজে অনুরাগ ঠাকুরকে বিষয়টি দেখভাল করার ভার দেন।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, সৌরভ এবং ব্রিজেশ দু’জনেই খুব ভালো ক্রিকেটার। ব্রিজেশকে সভাপতি করা হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। সেটাই হয়ত হত, যদি না কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর আচমকা মুম্বইয়ের বৈঠকে অবতীর্ণ হতেন। রবিবার রাতে বৈঠকে ঢুকে অনুরাগই সৌরভের নাম বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করেন। যদিও শেষ মুহূর্তের পালাবদলে মোটেও খুশি ছিলেন না এন শ্রীনিবাসন, কিন্তু তাঁর হাতে আর উপায়ও ছিল না।
পাশাপাশি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার দৌড়ে সাংবাদিক এবং দিল্লি ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা রজত শর্মাকে শনিবারই হঠিয়ে এগিয়ে যান সৌরভ। সূত্রের খবর, বর্তমান সিএবি সভাপতি বৈঠক করেন প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গেও। তারপরই খেলা ঘুরে যায়, জানাচ্ছে দ্য টেলিগ্রাফ।
২০১৫ সালে অনুরাগ ঠাকুরকে বিসিসিআই সচিব করার পিছনে সৌরভের বড় অবদান ছিল বলেও প্রতিবেদনের দাবি। সেবার অনুরাগের সঙ্গে লড়াইয়ে শ্রীনির পছন্দের প্রার্থী সঞ্জয় প্যাটেল এক ভোটে হেরে যান। ৪ বছর বাদে অনুরাগ ঠাকুর এভাবেই সৌরভকে প্রতিদান দিলেন বলে জানাচ্ছে দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন।
২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত, ছন্নছাড়া ভারতীয় দলের দায়িত্ব যখন হাতে নিয়েছিলেন, কেউ ভাবেনি মহারাজ কেরিয়ার শেষ করবেন ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে ৩৩ মাসের সিওএ শাসনের অবসানে গণতন্ত্র ফেরার লগ্নে নড়বড়ে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন ফের গেল মহারাজের শরণে।
Comments are closed.