National Mathematics Day: ইংরেজিতে ফেল করায় আটকে যায় স্কলারশিপ, সূত্র লিখতেন স্লেটে! চেনেন রামানুজনকে?
আজ ২২ ডিসেম্বর, জাতীয় গণিত দিবস। ১৮৮৭ সালে এই দিনটিতে তামিলনাড়ুর এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেছিলেন অসামান্য প্রতিভাবান গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন। ২০১২ সালে তাঁর জন্মদিনকে স্মরণে রেখেই ‘National Mathematics Day’ ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
কিন্তু কতটা চেনেন এই গণিতবিদকে, যাঁকে অয়েলার ও গাউসের সমপর্যায়ের গণিতবিদ বলে মনে করতেন প্রখ্যাত ইংরেজ গণিতবিদ ডিএইচ হার্ডি? কেন নিজের গাণিতিক প্রমাণের বেশিরভাগই স্লেটে লিখে রাখতেন রামানুজন? একজন সাধারণ কেরানি থেকে বিশ্বের অন্যতম গণিতজ্ঞ হয়ে ওঠার যাত্রাপথ কেমন ছিল? জানেন কি এই গণিতজ্ঞকেও ফেল করতে হয় কলেজে?
অঙ্ক ও রামানুজন:
ছোট থেকেই অঙ্কের প্রতি তীব্র আকর্ষণ তামিলনাড়ুর এরোডের গরিব ব্রাহ্মণ পুত্র রামানুজনের। পড়াশোনায় ভালো, কিন্তু অঙ্কে যতটা না চৌখস, ইংরেজি বিষয়ে ততটাই ভয় ছোট্ট ছেলেটির। সেই অগাণিতিক বিষয়ে তাঁর অনীহা এমন জায়গায় পৌঁছল যে গণিত বাদে সমস্ত বিষয়ে একবার ফেল করে বসলেন তিনি। যার জেরে কুম্বাকোটম কলেজে স্কলারশিপই ফস্কে গেল! পরে মাদ্রাজের পাচিয়াপ্পা কলেজে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভর্তি হন রামানুজন।
ছোট থেকেই ত্রিকোনমিতিতে তাঁর জ্ঞান ঈর্ষণীয়। এমনকি নিজেই যখন কিছু উপপাদ্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন রামানুজন এবং স্বতন্ত্র ভাবে অয়েলারের এককত্ব পুনঃআবিষ্কার করে ফেলেছেন তখন নেহাতই নাবালক তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রামানুজন বার্নোলির সংখ্যা ও অয়েলার-মাসেরনি ধ্রুবকের ওপর নিজের গবেষণা সম্পন্ন করে ফেলেছেন। কিন্তু এমন মেধাবী ছেলেটির গণিতচর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়াল তীব্র দারিদ্র। তাই সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের সামান্য কেরানির চাকরির নিতে হয় রামানুজনকে। তবে কথায় বলে প্রতিভা থাকলে তার মর্যাদা ঠিকই আসে। সেই পোর্ট ট্রাস্টেই কাজ করতে করতেই উত্তরণ হয় কেরানি রামানুজন থেকে গণিতজ্ঞ রামানুজনের।
গণিতের দুনিয়ায় রামানুজনের পরিচিতি:
পোর্ট ট্রাস্টে কাজ করার সময় কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় রামানুজনের। তার সূত্র ধরে গণিত বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে যায়। এভাবেই ১৯১১ সালে তাঁর প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ ‘জার্নাল অফ দ্য ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাতত্ত্বের উপর তাঁর গবেষণালদ্ধ ‘সাম প্রপার্টিজ অফ বারনৌলিস নাম্বারস’ নামে তাঁর প্রথম দীর্ঘ প্রবন্ধ একই বছর প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে একই পত্রিকায় তাঁর আরও দু’টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং সমাধানের জন্য কিছু প্রশ্নও প্রকাশিত হয়।
প্রতিভার স্বীকৃতি:
মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান স্যার ফ্রান্সিস স্প্রিং-এর সঙ্গে মিস্টার গ্রিফিথের আলাপ হওয়ার পর থেকেই রামানুজনের প্রতিভার স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। মাদ্রাজ শহরের বিশিষ্ট পণ্ডিত শেশা আইয়ার এবং অন্যদের পরামর্শে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জিএইচ হার্ডির সঙ্গে রামানুজন যোগাযোগ শুরু করেন। কিন্তু এখানেও বাধ সাধে সেই ইংরেজি! বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি চিঠি লেখেন হার্ডিকে। আর সেই চিঠির সঙ্গে সংযোজিত ছিল ১২০টি উপপাদ্য। তার সঙ্গে গণিতের এমন কিছু বিষয় ও সমস্যার কথা তিনি উপস্থাপনা করেন যা ইউরোপের অসামান্য প্রতিভাধর বিজ্ঞানীরা ১০০ বছর ধরে সমাধান করেছেন, তাও কিছু গাণিতিক সমস্যার সমাধান এখনও অধরা।
স্লেটে লিখে রাখতেন গণিতের সূত্র:
এতবড় মাপের একজন গণিতজ্ঞ তাঁর বেশিরভাগ গাণিতিক প্রমাণ খাতায় লিখতেন না! এ ব্যাপারে অনেক বিশেষজ্ঞের মত, রামানুজনের কাছে প্রমাণটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যেটা মূল জিনিস বলে মনে করতেন সেটাই শুধু লিখে রাখতেন। তবে আর আরেকটা কারণও অনুমান করা হয়। সেটা হল, রামানুজন আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না। আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কাগজের দাম ছিল ভীষণ চড়া। তাই প্রয়োজনে স্লেটে লিখতেন তিনি।
তত্ত্ব এবং উদ্ভাবন:
রামানুজনের নিজের মৌলিক উদ্ভাবনসমূহ এবং হার্ডির সঙ্গে তাঁর গবেষণার ফসলের মধ্যে রয়েছে উচ্চতর যৌগিক সংখ্যাসমূহের বৈশিষ্ট্য, বিভাজন ফাংশন এবং এর ইনফিনিটি বা অসীম সম্পর্কীয় তত্ত্বসমূহ। এছাড়া গামা ফাংশন, মডুলার রূপ, রামানুজনের অবিচ্ছিন্ন ভগ্নাংশসমূহ, ডাইভারজেন্ট সিরিজ, হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ হল গণিত শাখায় রামানুজনের অবিস্মরণীয় সব কীর্তি।
গণিতজ্ঞ ও ধর্ম:
গণিতজ্ঞ হলেও রামানুজন ছিলেন আশ্চর্যরকম ভাবে গোঁড়া ও সংস্কারে বিশ্বাসী। হার্ডি যখন তাঁকে কেমব্রিজে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তখন এই গণিতজ্ঞ পড়েন ধর্মসংকটে। তাঁর ধর্মবিশ্বাস ছিল সমুদ্র পাড়ি দিলেই জাত চলে যাবে। পরে আবার শোনা যায় স্বপ্নে আরাধ্য আদেশ শুনেই সমুদ্র পড়ি দিয়েছিলেন। তাঁর ঈশ্বরবিশ্বাস নিয়ে গণিতজ্ঞ এক জায়গায় বলেছেন, আমার কাছে একটি গাণিতিক সমীকরণের কোনও অর্থ নেই যতক্ষণ না তা ঈশ্বরের চিন্তা প্রকাশ করে।
বিভিন্ন রোগভোগের পর মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু হয় গণিতবিদ রামানুজনের।
Comments are closed.