বাংলার রসগোল্লা, বর্ধমানের সীতাভোগের জিআই শংসাপত্র জুটেছে আগেই, এবার বর্ধমানের কাঠের পুতুল তৈরির শিল্পকে জিআই শংসাপত্র দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বর্ধমানের বিখ্যাত কাঠের শিল্প পদ্ধতির ব্যবহার যাতে অন্য কেউ নিতে না পারে এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বর্ধমানের নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের চাহিদা বরাবরই রয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে এখানকার সূত্রধর সম্প্রদায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এক সময় জঙ্গল ঘেরা নতুনগ্রামে এই মানুষগুলি বসতি গড়েন। বর্তমানে নতুনগ্রাম বলে পরিচিত এই জনপদকে নতুন আকার দেওয়া হয়েছে। সূত্রধর সম্প্রদায়ের মানুষজন কাঠ দিয়ে শৌখিন আসবাবপত্র, পুতুল ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন। গত কয়েক বছর ধরে এখানকার হস্তশিল্প সারা দেশের নজর কেড়েছে। রাজ্য সরকার আয়োজিত বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় নতুনগ্রামের শিল্পীদের শিল্পসৃষ্টি প্রদর্শন ও বাজার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে সরকারি উদ্যোগে। শিল্পীরা মনে করেন, জিআই ট্যাগ পেলে তাঁদের কাঠের তৈরি পুতুল, আসবাবপত্রের বিক্রিবাটা আরও বাড়বে। স্বীকৃতিও পাবে এই প্রাচীন শিল্প এবং নতুন প্রজন্মও এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হবে।
নতুনগ্রামের শিল্পীদের এই দাবিকে অগ্রাধিকার দিয়েই জিআই ট্যাগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নতুন গ্রামে যে কোনও দিন গেলেই চোখে পড়বে শিল্পীদের কর্মব্যস্ততার ছবি। ঘরে ঘরে চলছে কাজ। পরিবারের সকলে মিলে পুতুল এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করে চলেছেন। আট থেকে আশি, কেউ কাঠ চেরাই করছে, কেউ পুতুল বানাচ্ছে, কেউ রং করছে। কারও দম ফেলার সময় নেই।
প্রথমদিকে মাটির দেব-দেবীর মূর্তি গড়ার কাজ করতেন বর্ধমানের এই শিল্পীরা। পরবর্তীকালে তাঁরা কাঠের আসবাবপত্রের তৈরির দিকে ঝোঁকেন। পুতুলের পাশাপাশি কাঠের বাসন ও আসবাবপত্র তৈরি করতে শুরু করেন এই শিল্পীরা। দেশব্যাপী তাঁদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্য সরকারের তরফেও এই শিল্পীদের পণ্য বিক্রি ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিল্পের বিপণনের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মেলায় নতুনগ্রামের কাঠ শিল্পের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। শিল্পীদের স্বার্থে সরকার এবার জিআই শংসাপত্র দেওয়ার পদক্ষেপ করায় দারুণ খুশি এই অঞ্চলের শিল্পীরা। জিআই ট্যাগ পেলে ব্যবসার পসার বাড়ানো এবং দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জনের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের শিল্পীরা। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের ফলে পরবর্তী প্রজন্মও উৎসাহিত হয়ে এই শিল্প ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখে চলবে বলে আশাবাদী প্রবীণ শিল্পীরা।
Comments are closed.