‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ উদ্বোধনের বিজ্ঞাপনেই কেন্দ্র খরচ করেছে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, মূর্তি তৈরিতে খরচ হয়েছিল ৩ হাজার কোটি
‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’র উদ্বোধনী বিজ্ঞাপনেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। এক আরটিআই-এর উত্তরে কেন্দ্র নিজেই জানাল এই তথ্য।
২০১৮ সালের ৩১ শে অক্টোবর সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ১৪৪ তম জন্মবর্ষে তাঁর মূর্তির উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মূর্তি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এত বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে মূর্তি বানানোয় প্রশ্ন তুলেছিলেন সমালোচকরা। নর্মদা নদী তীরে এই মূর্তির উদ্বোধনী বিজ্ঞাপনে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে, এনিয়ে আরটিআই করেছিলেন মুম্বইয়ের জনৈক আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট যতীন দেশাই। তাঁর সেই আরটিআই-এর উত্তরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানিয়েছে, এই মূর্তি উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন খরচ বাবদ ইলেকট্রনিক্স এবং প্রিন্ট মিডিয়া মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
৯ ই জানুয়ারি পাওয়া এই উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে যতীন দেশাই জানান, শুধুমাত্র খবর কাগজ এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় দেওয়া বিজ্ঞাপনেই কেন্দ্র সরকার খরচ করেছে এই পরিমাণ টাকা। যে বড় অঙ্কের টাকা আউটডোর বিজ্ঞাপনে খরচ হয়েছে তা এই আরটিআই-এ দেওয়া হয়নি। ওই আরটিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি সরকার ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় খরচ করেছে ২ কোটি ৬২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৬৩ টাকা এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে ব্যয় করেছে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। যতীন দেশাই মন্তব্য করেছেন, শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার কোনও যুক্তি নেই। দেশাইয়ের কথায়, এই ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’র পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া দলিতদের যেখানে দু’বেলা খাবার পেতেই প্রাণান্তকর অবস্থা হয়, সেখানে কোন যুক্তিতে এত টাকা স্রেফ বিজ্ঞাপনেই খরচ করে সরকার!
বিজ্ঞাপনে যে মোদী সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে তা সর্বজনবিদিত। ২০১৮ সালে সাংবাদিক অর্জুন পারমারের এক আরটিআই -এর উত্তরে ডিরেক্টরেট অব অ্যাডভার্টাইজিং অ্যান্ড ভিশুয়াল পাবলিসিটি (ডিএভিপি) জানিয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে ৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা মোদী সরকার খরচ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে। পূর্বতন ইউপিএ সরকার দশ বছরে বিজ্ঞাপনে খরচ করেছিল ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর মোদী সরকার প্রথম তিন বছরেই খরচ করেছিল প্রায় ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ নিয়ে বিতর্কও এই প্রথম নয়। যে বিজেপি সরকার সামাজিক বৈষম্য দূর করতে সর্বদা সচেষ্ট বলে দাবি করে, তারাই কীভাবে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মূর্তি বানায় তা নিয়ে একাধিকবার কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।
ব্রিটিশ সাংসদ পিটার বোন ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন ‘টোটাল ননসেন্স’। প্রধানমন্ত্রী মূর্তি উদ্বোধন করার একদিন পরে, ওই ব্রিটিশ সাংসদ বলেছিলেন, একদিকে আমাদের থেকে ১.১ বিলিয়ন পাউন্ডের (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯৪০০ কোটি টাকা) সাহায্য নেবে ভারত, অন্যদিকে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মূর্তি বানাবে, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। এতেই থামেননি পিটার বোন। তিনি তোপ দাগেন, ব্রিটেনের উচিত অবিলম্বে ভারতকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩১ শে অক্টোবর গুজরাতের নর্মদা নদীর তীরে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার উচ্চতার মূর্তির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এটাই বিশ্বের উচ্চতম স্ট্যাচু। যা উচ্চতায় চিনের স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ (১৫৩ মিটার) ও আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকেও (৯৩ মিটার) হার মানিয়েছে।
Comments are closed.