দৃষ্টান্ত: শখের গাড়ি বিক্রি করে কিনেছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার! মুম্বইয়ের শাহনাজ বিনামূল্যে তা পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা সংক্রমিতদের বাড়ি বাড়ি
ছোট থেকেই গাড়ির শখ মুম্বইয়ের মালাডের বাসিন্দা শাহনাজ শেখের। ২০১১ সালে ফোর্ড এনডিভার কেনেন পেশায় ব্যবসায়ী শাহনাজ। গাড়ির নম্বর প্লেটে বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ডের ‘০০৭’ নম্বর ব্যবহারের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করেন, লাগিয়েছেন শৌখিন মিউজিক সিস্টেম। এবার শখের সেই এসইউভি বেচেই করোনা বিধ্বস্ত মুম্বইবাসীর পাশে দাঁড়ালেন ৩১ বছর বয়সী শাহনাজ।
গত মার্চে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে জারি হওয়া লকডাউনের সময় নিজের গাড়িকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন শাহনাজ। কিন্তু তারপরেও এমন এক ঘটনার সাক্ষী হন, যা তাঁকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দেয়। জীবনের মূল্যের কাছে তাঁর ফিকে লাগে ব্যক্তিগত শখ-আহ্লাদ।
গত ২৮ মে শাহনাজের বিজনেস পার্টনারের ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বোন করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালের বাইরে একটি অটো রিকশাতেই মারা যান। শাহনাজ জানতে পারেন, সময়মতো অক্সিজেন পেলে হয়ত বাঁচানো যেত মেয়েটিকে। তাঁর মতো আর কাউকে যাতে এভাবে অক্সিজেনের অভাবে মরতে না হয় তার জন্য নিজের গাড়িই বিক্রি করে দেন শাহনাজ। বর্তমানে সেই গাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে অসুস্থ মানুষদের অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণের কাজ করছেন তিনি। গত ৫ জুন থেকে মুম্বইয়ের ২৫০ টির বেশি করোনা সংক্রমিত পরিবারকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার জুগিয়েছেন, এখনও জুগিয়ে চলেছেন। তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বন্ধুরা।
শাহনাজের কথায়, আমার বিজনেস পার্টনারের অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বা বোনকে নিয়ে পাঁচটি হাসপাতালে চক্কর কেটেছিলেন তাঁর স্বামী। করোনা পজিটিভ বলে কোনও হাসপাতালের তরফে রূঢ়ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় ভর্তি নেওয়া যাবে না, কেউ জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমিতের চিকিৎসার পরিকাঠামোই নেই তাদের হাসপাতালে। আবার যেখানে পরিকাঠামো আছে সেখানে বলা হয় ভেন্টিলেটরের অভাব। একটার পর একটা হাসপাতালের দরজায় ঘুরে ঘুরেও সম্পূর্ণ বিনা চিকিৎসায় মারা যান সেই মহিলা। এই ঘটনার কথা যখন শাহনাজ তাঁর কিছু চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করেন, তাঁরা জানান অক্সিজেনের বন্দোবস্ত থাকলে হয়ত তাঁরাই ভালো করে তুলতে পারতেন ওই মহিলাকে। এভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হত না। সেখান থেকেই শাহনাজ সিদ্ধান্ত নেন, নিজে জ্ঞানত আর একটি মানুষকেও অক্সিজেনের অভাবে মরতে দেবেন না তিনি। তাই শখের গাড়ি বিক্রি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার কথা দু’বার ভাবেননি। কিন্তু সেখানেও সমস্যা।
টাকা হাতে পেয়েও অক্সিজেন কিনতে পারেননি তিনি। শাহনাজ দেখেন, বাজারে সত্যিই অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব। এই অবস্থায় কয়েকজন বন্ধুর সাহায্যে সরাসরি অক্সিজেন উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে তা সরাসরি অসুস্থদের কাছে পৌঁছে দেন শাহনাজ ও কয়েকজন বন্ধু। কারও অক্সিজেনের অভাব হলে শাহনাজের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ও ফোনে যোগাযোগ করেন। আবার করোনা সংক্রমিত কোনও পরিবার যদি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন তখন শাহনাজ ও তাঁর বন্ধুরা মিলে সেই বাড়িতেই অক্সিজেন পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই করোনা বিধ্বস্ত মুম্বইয়ের পাশে দাঁড়াচ্ছেন হিরো শাহনাজ।
গাড়ি বিক্রি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার ব্যাপারটা অবশ্য শাহনাজের নিজের কাছে কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ নয়। তার কথায়, জীবনের মূল্য কি ব্যক্তিগত শখের থেকে বড়? পরিস্থিতির দাবি মেনে সবাইকেই এমন কাজ করতে হয়।
কারও প্রশংসার তোয়াক্কা করেন না মুম্বইকর শাহনাজ
Comments are closed.