২০ তেই বিধবা কেরলের সিফিয়া হানিফের সন্তানদের নিয়ে নাছোড় লড়াই, সাফল্যের স্বীকৃতি নিরজা ভনোট পুরস্কারে
১৬ বছর বয়সে বিয়ে, আর ২০ বছর বয়সে বিধবা হন কেরলের সিফিয়া হানিফ। কোলের দুই শিশুকে বড় করার জন্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের দোরে দোরে ঘুরেও সাহায্য মেলেনি। জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতে মানুষ হয় হাল ছেড়ে দেয়, না হলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সিফিয়া হানিফ বেছে নিয়েছিলেন দ্বিতীয়টি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজ নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি, তাঁর মতো বিধবা ও অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিফিয়া হানিফ। এখন ১০০-র বেশি গরিব পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের বন্দোবস্ত থেকে ৩৮ জন বিধবার পেনশনের ব্যবস্থা, ৭ জনের পড়াশোনার ভার তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। এ বছরের নিরজা ভনোট পুরস্কার জয়ী সিফিয়া হানিফের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
কেরলের পালাক্কাডের ভাদাক্কানচেরিতে নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়াই রেওয়াজ। সেই মতো মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় সিফিয়ার। কিন্তু বছর চারেক ঘুরতে না ঘুরতেই স্বামীর মৃত্যু হয়। আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। সিফিয়া ভেবেছিলেন এই দুঃসময়ে আত্মীয়-বন্ধুরা মুখ ফেরাবেন না। একটা কাজ অন্তত যোগাড় করে দেবেন তাঁরা। এই সব ভেবেই ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে বছর পাঁচেক আগে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন। কিন্তু গভীর রাতে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে বেঙ্গালুরু শহরের এক বাসস্ট্যান্ডে বসে জীবনের কঠিনতম অভিজ্ঞতা হয় সিফিয়া হানিফের। যাঁদের আশ্বাসে বাড়ি ছেড়ে এতদূর ছুটে গিয়েছিলেন, বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে তাঁদের একজনেরও দেখা পাননি সিফিয়া। ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে হয় তাঁরা ফোন কেটে দিয়েছেন নয়তো ফোন তোলেননি।
সেই সময় তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন পাত্তি নামে এক মহিলা। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন স্বাবলম্বী তাঁকে হতেই হবে। ফের পড়াশোনা শুরু করেন। সেই সঙ্গে কাজ নেন একটি কল সেন্টারে। সকালে কাজে যাওয়ার সময় একটি অনাথ আশ্রমের জিম্মায় ছেলেদের রেখে দিয়ে যেতেন। সন্ধেয় কাজ থেকে ফেরার সময় তাঁদের নিয়ে বাড়ি ফেরা, সংসারের কাজ আর নিজের পড়াশোনা, এইভাবে দিন চলছিল সিফিয়া হানিফের। কিন্তু কঠিন এই রুটিনে কয়েক মাসের মধ্যেই মা-ছেলে দুজনেই হাঁফিয়ে ওঠেন। ফিরে আসেন কেরলে। পরে হাসপাতালের রিসেপশনিস্টের কাজ যোগাড় করেন সিফিয়া। যা রোজগার হতো তার সিংহভাগ খরচ করতেন পাঁচটি পথ শিশুর পড়াশোনায়। এরপর তাঁর মতো বিধবা থেকে অভাবী মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শুরু করেন ফেসবুক ক্যাম্পেনিং। দারুণ সাড়া পান তাতে। এইভাবে একের পর এক গরিব বিধবা, পথশিশু থেকে বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সিফিয়া হানিফ। হাসপাতালের কাজ, টিউশন, সমাজসেবার কাজ সামলে সমান দক্ষতায় মাস্টার্স শেষ করেছেন সিফিয়া হানিফ। বিএড করেছেন, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে ডিপ্লোমা শেষ করার পর এমফিল করার লক্ষ্যে এখন এগোচ্ছেন সিফিয়া হানিফ। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য গত ৭ ই সেপ্টেম্বর চণ্ডীগড়ে নিরজা ভনোট পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় জীবন যুদ্ধে অপরাজেয় সিফিয়া হানিফকে।
Comments are closed.