১৭ নভেম্বরের মধ্যে অযোধ্যা-সহ চার গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়, তাকিয়ে আছে গোটা দেশ

দেওয়ালি, দশেরার ছুটি কাটিয়ে আগামী ৪ নভেম্বর খুলছে সুপ্রিম কোর্ট। তার দশ দিনের মধ্যেই রয়েছে সারা দেশে আলোড়ন ফেলা চার-চারটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দান। সব কটি মামলার রায়ই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে। রায়গুলি মামলার বাদী, বিবাদী, যে কোনও তরফেরই পক্ষে কিংবা বিপক্ষে যাক না কেন, তা নিয়ে সোরগোল পড়বেই। ১৭ নভেম্বর অবসর নিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তাঁর কার্যকালের মধ্যেই এই চারটি মামলার রায় দান হওয়ার কথা।
প্রথমটি অবশ্যই ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলা। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে হতে চলেছে  অযোধ্যার রামমন্দির-বাবরি মসজিদের জমি বিতর্ক নিয়ে মামলার রায় দেওয়া হবে এর মধ্যে। এ ছাড়া আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বেঞ্চে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি। কেরলের সবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে ২০১৮ সালের শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের প্রেক্ষিতে যে রিভিউ পিটিশন হয়েছিল, তারও রায় দান হবে ১৭ তারিখের মধ্যে। রাফাল মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্লিনচিট দেওয়ার পর দায়ের করা রিভিউ পিটিশন পুনর্বিবেচনা নিয়ে মামলা এবং তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় প্রধান বিচারপতি অফিসকে আনা সংক্রান্ত মামলার রায়ও একই সময়ে হওয়ার কথা।
অযোধ্যা মামলার রায় কী হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে শুক্রবার থেকেই গাজিয়াবাদে ১৪৪ ধারা জারি করে দেওয়া হয়েছে। গাজিয়াবাদের হিন্দু ও মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। অযোধ্যা জুড়ে বিশাল নিরাপত্তাবাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে। বারাণসী, মথুরার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। খোদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের সংযত থাকার অনুরোধ করেছেন। দিন তিনেক আগেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস এ বোবদে মন্তব্য করেন, পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মামলা এটি। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
কেরলের সবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক রায় দেয় শীর্ষ আদালত। এই রায়ের প্রেক্ষিতে প্রায় ৬৮ টি মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। তার মধ্যে ৫৭ টিই ২০১৮ সালের ওই রায় পুনর্বিবেচনা আবেদন সংক্রান্ত। ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের আয়াপ্পা দেবের দর্শনের অধিকার সংক্রান্ত এই মামলার রায়ও রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে।
রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল রাফাল দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্ট যে ক্লিনচিট দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনা করার মামলা। এর রায়ও ১৭ নভেম্বরের মধ্যেই দেওয়ার কথা।। ফ্রান্স থেকে ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, গত বছরই তাতে ক্লিনচিট দিয়েছে শীর্ষ আদালত। যদিও পরে রাফাল রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি হল তথ্যের অধিকার আইন সংক্রান্ত মামলা। আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট সুভাষচন্দ্র আগরওয়ালের দায়ের করা এই মামলায় গত ৪ এপ্রিল রায়দান স্থগিত রাখে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ।

Comments are closed.