সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দফতরও আরটিআই বা তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় চলে এল। বুধবার এই সংক্রান্ত মামলার রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিআরপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত জানায়, সংসদীয় গণতন্ত্রে কোনও বিচারপতিই আইনের ঊর্ধ্বে নন। প্রধান বিচারপতিও সরকারি কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত। তথ্যের অধিকার এবং গোপনীয়তার অধিকার দুটো হল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
গত শনিবারই বহু বিতর্কিত অযোধ্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি অবসর নিচ্ছেন আগামী ১৭ নভেম্বর। তাঁর অবসরের আগে আগামী তিনদিনের মধ্যে আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ও হয়ে যাবে। তার মধ্যে বৃহস্পতিবার কেরলের সবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে রিভিউ পিটিশনের রায় বেরবে। একইসঙ্গে বেরবে রাফাল মামলার রিভিউ পিটিশনেরও রায়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টকে উধ্বৃত করে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি রাহুল গান্ধীর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি রাহুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন। সেই রায়ও রয়েছে প্রধান বিচারপতি অবসর নেওয়ার আগে ঘোষণা করে যাবেন। সবমিলিয়ে এই পাঁচটি মামলাই দেশের ধর্মীয় ভাবাবেগ, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বলে পরিগণিত হয়ে এসেছে।
অবসরের আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ শতাব্দী প্রাচীন সংস্কার ভেঙ্গে ঋতুমতী মহিলাদের সবরীমালা মন্দিরে ঢোকার অধিকার দেয়। কিন্তু তারপরেও ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের আয়াপ্পা দেবের দর্শন সহজ হয়নি। ধর্মীয় অনুভুতি ও মন্দিরের ঐতিহ্যের প্রশ্ন তুলে প্রবল আন্দোলন শুরু করে বিজেপি-সহ দক্ষিণপন্থী দল ও সংগঠনগুলি। এই প্রেক্ষিতে এক বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে ৫৬ টি রিভিউ পিটিশন দায়ের হয়। এছাড়াও হয় চারটি রিট পিটশন, কেরল সরকারের তরফে দায়ের করা দুটি মামলা, দুটি বিশেষ লিভ পিটিশন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই সবকটি মামলার রায় স্থগিত রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
বিরোধীদের আবেদন খারিজ করে গত বছরের ডিসেম্বরে রাফাল মামলায় মোদী সরকারকে ক্লিনচিট দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেও ফ্রান্স থেকে ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনাকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব থাকে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ থেকে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনকে তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশওয়ান্ত সিংহ ও অরুণ শৌরি। তাঁরা রাফাল রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। গত ১০ মে এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবারই হতে চলেছে এই মামলার রায়।
Comments are closed.