বামপন্থা ভয়ঙ্করী! বই লিখলেন তথাগত রায়, ‘দারিদ্র বন্দনা করে গণ্ডগোল পাকানোকে রাজ্যে সম্মানজনক জায়গা দিয়েছে বামপন্থীরা’

আগাগোড়া বাম বিরোধী হিসেবে পরিচিত তথাগত রায় এবার বই লিখলেন বাংলা এবং বিদেশের বামপন্থা নিয়ে। আগামী ডিসেম্বর মাসেই তাঁর এই বই প্রকাশিত হতে চলেছে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের লেখা এই বইয়ের নাম ‘বামপন্থা ভয়ঙ্করী বাংলা ও বিদেশে’। বইটি প্রকাশ করছে মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনা সংস্থা।
২০১৯ লোকসভা ভোটের পর থেকেই মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় বাংলার রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কখনও নিশানা করেছেন মমতা ব্যানার্জিকে, তো কখনও তৃণমূলের তোলা জয় বাংলা স্লোগানকে। আবার যাদবপুর ইস্যুতে সিপিএম এবং নকশালদের তীব্র আক্রমণ করেছেন তথাগত রায়। তাঁর একাধিক ট্যুইট নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এবার ‘বামপন্থা ভয়ঙ্করী বাংলা ও বিদেশে’ শীর্ষক বইতে বিভিন্ন ইস্যুতে সিপিএম এবং বামপন্থীদের তুলোধোনা করেছেন তিনি।
কিন্তু রাজ্যে সিপিএম শাসনের অবসানের প্রায় ন’বছর বাদে কেন বামপন্থীদের নিয়ে বই লিখলেন তথাগত রায় এবং কী লিখেছেন তাতে, তা নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি।

প্রশ্ন: হঠাৎ বামপন্থীদের নিয়ে বই লেখার কারণ কী?

তথাগত রায়: দেখুন বাংলার রাজনীতিতে বামপন্থীরা যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল তা নিয়ে বিস্তারিত লেখার একটা ভাবনা আমার ছিল। এরই মধ্যে ‘বাংলায় বামেরা’ নামে একটি বই পড়ি। তখনই মনে হয়েছিল, এই বইকে কাউন্টার করে বামপন্থীদের নিয়ে আমার মনোভাব লেখা জরুরি।

প্রশ্ন: আপনার বইয়ের মূল বিষয়টা কী?

তথাগত রায়: বিংশ শতকের শুরু থেকে বাঙালি হিন্দুদের মানসিকতা দখল করে রেখেছিল কংগ্রেস। কিন্তু তা ছিল রাজনৈতিক মানসিকতা। সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা ছিল না। এই জায়গাটাই ধরে বামপন্থীরা। বামপন্থী মূল্যবোধের একটা সূচনা হয় এরাজ্যের হিন্দু বাঙালির মধ্যে। সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি ঢুকিয়ে দেওয়া শুরু করে বামপন্থীরা। ফাঁকিবাজি, গোলমাল পাকানোকে একটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে আসে বামপন্থীরা। তার সঙ্গে যেটা বামপন্থীরা শুরু করে তা হল দারিদ্র বন্দনা। মানুষকে গরিব করে রেখে তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করার সূচনা বামপন্থীদের হাত ধরে। এই গোটা বিষয়টাই একটা ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছায় ১৯৬৭ সালে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর। ধর্মঘটকে বৈধতা দেয় বামপন্থীরা। এর ফলশ্রুতি, রাজ্য থেকে একের পর এক শিল্পের বিদায়। যা আমি নিজের চোখে দেখেছি। সেখান থেকেই শুরু রাজ্য থেকে বাঙালি ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানের জন্য অন্য রাজ্যে যাওয়া। অনেক পরে সিপিএম রাজ্যে শিল্প আনার চেষ্টা করেছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং কম্পিউটারের বিরোধিতা করে রাজ্যের কফিনে পেরেক মেরেছে বামপন্থীরা।

প্রশ্ন: বাংলার বাইরের বিষয়ও কি জায়গা পেয়েছে আপনার বইয়ে?

তথাগত রায়: মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের প্রয়োগ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিন, উত্তর কোরিয়া এবং কম্বোডিয়ার অবস্থা, সেখানকার রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতির উল্লেখ করেছি এই বইয়ে। তবে একটা কথা আমি বইয়ে উল্লেখ করেছি, বাঙালি মাত্রই বামপন্থী মূল্যবোধ, এই যে একটা চর্চা আছে, তা আমি বিশ্বাস করি না। তাছাড়া, বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও বামপন্থীদের কোনও ধারাবাহিক প্রভাব ছিল না।

 

Comments are closed.