সুশান্ত ঘোষের ডায়েরি #৩ ‘এলাকা ঠিক হতে কত দিন লাগবে?’ জানতে চাইলেন জ্যোতিবাবু। বললাম, আশা করি আপনি বিদেশ থেকে ফেরার আগে হয়ে যাবে।
আগের পর্ব শেষ করেছিলাম অটল বিহারী বাজপেয়ীকে দিয়ে। কিন্তু ২০১৪ সালে দেশের মানুষকে ‘আচ্ছে দিন’ এর স্বপ্ন দেখিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বের তুলনা করলে কোনও যুক্তিবাদী মানুষই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করবেন না। বিশেষ করে নোট বাতিল, জিএসটি’র মতো ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে যে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাতে ‘আচ্ছে দিন’ সবাই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছেন। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে ৫৬ ইঞ্চির ছাতির মালিক দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বছরে দেশের দু’কোটি বেকারকে চাকরি দেওয়া হবে, বিদেশের কালো টাকা উদ্ধার করে এনে সব পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। একজন কৃষককেও আত্মহত্যা করতে হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে দেশকে সত্যিকারের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। সহজভাবে বললে, দেশের হাল বেহাল।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েও ২৮২ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয় বিজেপি। কিন্তু এই চার বছরে দেশের মানুষের ‘ছেড়ে দে মা কাঁদে বাঁচি’ অবস্থা। সমস্ত অংশের মানুষের স্বপ্ন শুধু ভেঙে চুরমারই হয়ে যায়নি, দেশ এক ভয়ংকর বিভীষিকার সম্মুখীন হয়েছে। যখন দেখি স্বঘোষিত হিন্দু ধর্মের রক্ষকরা জোর করে ধর্ম রক্ষা করার নামে রাস্তায় অন্য ধর্মের মানুষকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে খুন করছে, গো-রক্ষার নামে দিনের আলোয় অন্য ধর্মের মানুষের উপর তাণ্ডব চালাচ্ছে, তখন যন্ত্রণায় ও কষ্টে বুক কেঁপে ওঠে। রাজস্থানের মাটিতে যখন প্রকাশ্যে মালদহের ছেলে আফরাজুল খানকে জীবন্ত কুপিয়ে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, যখন কলেজ ছাত্রকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়, তখন ভারতের সর্বোচ্চ প্রশাসক এই বিষয়গুলি নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেন না। অত্যন্ত সচেতনভাবে নীরব হয়ে থাকেন। তখন ধর্মনিরপেক্ষ, সচেতন, গণতন্ত্রিক মানুষের বিবেক ক্ষত-বিক্ষত হয়। প্রশ্ন আসে, স্বাধীনতার এত বছর পরে আমরা দেশের মানুষ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি?
এবার ফিরে যাব কিছু বছর পিছনে। বাংলায় পায়ের তলায় মাটি পেতে এনডিএ’কে সামনে রেখে এই বিজেপি প্রথম যে বন্ধু খুঁজেছিল, তার নাম তৃণমূল। তাদের যৌথ প্রয়াসে ১৯৯৮ এর শেষ থেকে একটানা প্রায় আড়াই বছর বাংলার মাটি হয়েছে রক্তাক্ত। এর পট পরিকল্পনা তৈরি হয় ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম সরকারকে কীভাবে হঠানো যায় তা দিয়ে। স্লোগান ছিল, ‘হয় এবার, নয় নেভার।’ অনেক লাইনের আমদানি হয়েছিল। এই মিলিত শক্তি ক্ষমতা দখলের জন্য ‘জনযুদ্ধ’ নামক খুনে-শক্তির সঙ্গে হাত মেলাতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। যার ফলে বাংলার রাজনীতিতে আগে যে ধারা ছিল না, সেই ধারা প্রত্যক্ষ করলেন রাজ্যের মানুষ।
২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বেশ কিছুকাল আগে থেকেই কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে আসা তৃণমূল এবং বিজেপি যৌথভাবে যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল দক্ষিণবঙ্গে তিন জেলার কিছু অংশে, তা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মরিয়া ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ ছিল। ১৯৯৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গে মূলত তিনটি জেলা, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও হুগলির সীমানা বরাবর কয়েকটি থানা এলাকার বেশ কিছু গ্রামে হিংসা, সন্ত্রাস ছিল পরিকল্পিত। দুই-আড়াই বছর ধরে দিনের দিনের পর দিন খুন, ধর্ষণ,লুঠতরাজ, ঘর-বাড়ি পোড়ানো, জরিমানা আদায়, গ্রামছাড়া করা, স্কুল-কলেজে পড়াশোনা বন্ধ করা, সব মিলে এই তিন জেলায় সন্ত্রাসের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তার লক্ষ্য ছিল ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচন। সন্ত্রাসের মধ্যেই ২০০০ সালের মাঝামাঝি পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তার মহড়া সেরে নিয়েছিল বিরোধীরা। মেদিনীপুর, হুগলি ও বাঁকুড়ায় সব মিলিয়ে রাজ্য বিধানসভার ৬৯ টি আসন। টার্গেট করে যদি এগুলো জেতা যায় তবে বিধানসভার ভোটে ক্ষমতার দখল অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে, এমনই ছিল বিরোধীদের অঙ্ক। পাঁশকুড়া উপনির্বাচনের পর আমরাও বুঝতে পারছিলাম, এই আসনগুলোর বেশিরভাগ হাতছাড়া হলে সরকার রক্ষা করা যাবে না।
যখন এরাজ্যের মানুষ বামফ্রন্ট সরকারকে হাতিয়ার করে বাংলার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা মজবুত করে ভূমি সংস্কারের সাফল্য, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি বাস্তবায়নে, গণতন্ত্র সম্প্রসারণে ব্যস্ত ছিল, হঠাৎ করে নেমে আসা আক্রমণের সামনে তাই প্রথম প্রথম মানুষ স্তম্ভিত, হতচকিত হয়ে পড়ে। কিছুটা দিশেহারা অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। আক্রমণকারীদের আড়াল করতে কিছু গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছিল। তাতে খানিকটা সফলও হয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বাংলার মানুষকে আক্রমণ ও অপপ্রচারের বিভ্রান্তি দিয়ে বেশি দিন দমিয়ে রাখা কখনোই সম্ভব হয়নি। ইতিহাস সে কথাই বলে। এবারও আক্রান্ত নির্যাতিত মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধের সংগ্রামে শামিল হতে শুরু করে। যার নেতৃত্ব দেয় সিপিএম পার্টি। আক্রমণের জবাবে শুরু হয় প্রতি-আক্রমণ। সর্বাত্মক প্রতিরোধ। একাজে সময় লাগে প্রায় দু’বছর। ঘুরে দাঁড়ায় আক্রান্ত, নির্যাতিত সাধারণ মানুষ। শান্তি ফেরে তিন জেলার ওই গ্রামগুলিতে। ওদের সব স্লোগানকে ব্যর্থ করে বাংলার মানুষ ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আবার বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।
এবার আসব ‘জনযুদ্ধ’ প্রসঙ্গে। খবরটা বেরিয়েছিল ‘আজকাল’ পত্রিকায়। ‘পাঁচ সিপিএম নেতাকে খুন করতে জনযুদ্ধ’কে লাগিয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি।’ (১২ এপ্রিল ২০০১)। এ খবরের সত্যতা প্রসঙ্গে কেউ সন্দেহ পোষণ করতে পারেন, কেউ ভাবতে পারেন উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। জনযুদ্ধের দলিল, পুস্তিকা, বিবৃতি ইত্যাদিতে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক চরিত্র যেভাবে উন্মোচন করা হয়, যেভাবে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আঘাত হানার কথা বলা হয়েছিল, তাতে এ ধরনের গোপন বোঝাপড়ার সংবাদ অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, সিপিএমের বিরুদ্ধে বিজেপি-তৃণমূল ও জনযুদ্ধ বিভিন্ন এলাকায় জোট বেঁধে কাজ করছে। বামফ্রন্ট, মূলত সিপিএমকে আক্রমণ করাই তাদের যৌথ লক্ষ্য। ‘শত্রুর শত্রু, আমাদের মিত্র’ এই রণকৌশলেই হাত মিলিয়েছিল তারা। যদিও জনযুদ্ধের দলিলেও তৃণমূল এবং বিজেপিকে শ্ত্রু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
জনযুদ্ধের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মানিক তাঁর পদত্যাগ পত্রে লিখেছিলেন, (২৫.০১.২০০২) ‘নির্বাচনের আগে কেশপুর দখলের জন্য যৌথ অভিযানে আমাদের বাহিনীকে পাঠানো হয়। ওই দিন সিপিএম এবং পুলিশের ঘেরাও ও দমনের মধ্যে পড়লে, আমাদের বড় ধরনের লোকসান হতে পারত’। পরবর্তীকালে জনযুদ্ধের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির আন্তঃপার্টি মতাদর্শগত বিতর্ক-দলিল ১ এ মানিকের এই বক্তব্যের জবাব দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘গড়বেতায় আমরা প্রথমে বিজেপি-তৃণমূল যৌথবাহিনী এবং পরে সিপিএমের সাথে তিক্ত সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলাম। এই জটিল পরিস্থিতিতে একের পর এক লড়াইয়ের দরকার হয়ে পড়ে এবং সেই কারণেই প্রয়োজন ছিল, শত্রুর বিভিন্ন অংশের মধ্যের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগানোর।’ ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে গড়বেতার ছোট আঙারিয়ায় বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে বিস্ফোরণে তাদের সংগঠনের পাঁচ সদস্য মারা যায় বলে দাবি করেছিল জনযুদ্ধ। এখানেও প্রশ্ন ওঠে, তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য বা কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে জনযুদ্ধের কর্মীরা জড়ো হয়েছিল কেন?
২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমকে উৎখাতের জন্য মেদিনীপুরে জনযুদ্ধ নামক ভাড়াটিয়া বাহিনীকে ব্যবহারের পরিকল্পনা যাতে যথাযথভাবে রূপায়ণ করা যায়, তা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে তৎকালীন সময়ের তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (পরে প্রয়াত হন) হুগলি, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের সীমান্তে প্রায় দু’সপ্তাহ অবস্থান করেছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে অবিভক্ত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার ৬৯ টি বিধানসভা আসনের ৫০টি জেতার জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন মাস্টার প্ল্যান। পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিআই-এর পরাজয়, সেই পরিকল্পনা রূপায়ণকারী শক্তিকে আরও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। সন্ত্রাসের সেই পটভূমিতেই, ‘গ্রাম থেকে কলকাতা, পথ দেখাবে গড়বেতা’, স্লোগান তোলা হয়েছিল। সেই স্লোগানের পথ বেয়েই পাঁশকুড়া উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়লাভ। আবার এই জয়ের পথ ধরেই জন্ম হয়েছিল নতুন স্লোগানের, ‘কেশপুর লাইন’।
২০০১ এর বিধানসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী ভিকট্রি চিহ্ন দেখিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের জয় নিশ্চিত। কিন্তু ফল ঘোষণার দিন দেখা গেল, অবিভক্ত মেদিনীপুর, হুগলি, বাঁকুড়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রায় ৮০ শতাংশ আসনে জয়লাভ করে বামফ্রন্ট। সেই নির্বাচনে অবশ্য বামফ্রন্ট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সিপিএমও এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু ১৯৯ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে বামফ্রন্ট।
এ প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা একান্তভাবে এই লেখার মধ্যে উল্লেখ করা প্রয়োজন। যখন তিন জেলাকে ঘিরে সন্ত্রাস চলছে, সে সময় পার্টিতে আমি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির একজন সদস্য মাত্র ও রাজ্যের একজন রাষ্ট্রমন্ত্রী (পরিবহণ দফতর)। হঠাৎ করে তিন জেলার সীমান্তবর্তী স্থান গড়বেতা থেকেই অতর্কিতে আক্রমণ ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়। সমাজবিরোধীদের কাজে লাগিয়ে সংগঠিত সেই সন্ত্রাস প্রথম অবস্থায় আমদের পর্যুদস্ত করে ফেলে। কিন্তু অল্প কিছু মাসের মধ্যেই গড়বেতার মানুষ এই সন্ত্রসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় প্রতিরোধ। গড়বেতার পরেই হুগলির গোঘাট, খানাকুল, বাঁকুড়ার কোতলপুর-জয়রামবাটি হয়ে একেবারে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত আর মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা, কেশপুর, পিংলা, দাঁতন হয়ে খেজুরি পর্যন্ত পুরো এলাকা সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ ছিল প্রায় রোজকার ঘটনা।
এই সন্ত্রাসের আগে মেদিনীপুর জেলার একাংশে ঝাড়খণ্ড পার্টির নেতৃত্বে সন্ত্রাস সংগঠিত হলেও সেখানে বোমা-বন্দুকের ব্যবহার ছিল না। সেখানে তির-ধনুক, টাঙ্গি-বল্লম এই সব নিয়েই খুন-সন্ত্রাস সংগঠিত হয়েছিল। এই আক্রমণে প্রাণ হারান অনেক বাম নেতা-কর্মী। কিন্তু ২০০১ সালের আগে গড়বেতা, কেশপুরে যে সন্ত্রাস শুরু হয়, তখন থেকেই ব্যপক হারে বোমা-বন্দুকের ব্যবহার শুরু হয়। এই ধরনের আক্রমণে প্রথমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা তো দূরের কথা, এই আক্রমণের আতঙ্ক কাটিয়ে মানুষকে প্রতিরোধের সংগ্রামে শামিল করতে খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় পার্টিকে। কিন্তু যখন আক্রান্তদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়, চোখের সামনে আপনজনের খুন, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, চাষের জমি থেকে জোর করে কৃষকদের সরিয়ে দেওয়ার মতো সব ঘটনা চোখের সামনে দেখতে হয়, তখন সেই সব মানুষকে আর পিছোনোর জায়গা না থাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। হয় মরব, নয় মারব-এর মাঝে আর কিছু থাকতে পারে না। আক্রমণকারীরা সংখ্যায় নগন্য কিন্তু আক্রান্তদের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই আক্রান্ত জনগনের একটা বড় অংশ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিক প্রস্তুতি নেয়, তখনই প্রতিরোধের সংগ্রাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
২০০০ সালের, জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কোনও একদিন, জ্যোতি বসু সম্ভবত সেদিন ইজরায়েল সফরে যাবেন। তখন বিধানসভার অধিবেশন চলছে। উনি বিধানসভায় এসেছিলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী এক পা গাড়িতে তুলে দিয়েছেন, এমন সময় আমি সামনে পৌঁছোলাম। আমাকে দেখে জয়কৃষ্ণদা (জ্যোতি বসুর আপ্ত সহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষ।) বললেন,’জ্যোতিবাবু তোমার খোঁজ করছিলেন।’ আমাকে একথা বলেই উনি জ্যোতি বসুকে বললেন, ‘এই তো সুশান্ত এসেছে’। তখন জ্যোতিবাবু হাত নেড়ে আমাকে কাছে ডাকেন। আমি কাছে যাওয়ার পর উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের এলাকা ঠিক হতে আর কত সময় লাগবে?’ আমি জয়কৃষ্ণদাকে প্রশ্ন করলাম, এবার কতদিনের সফর? জয়কৃষ্ণদা বললেন, ‘সব মিলিয়ে প্রায় দশ দিন।’ তখন আমি জ্যোতি বাবুর কাছে মুখ নামিয়ে বললাম, ‘আপনি বিদেশ থেকে ফেরার আগে আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি ফিরে এলে ভাল খবর দিতে পারব।’
(চলবে)