আস্তাকুঁড়ে থেকে বই সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছেন বিরাট লাইব্রেরি; পেশায় ট্রাক চালকের আরেক নাম ‘বইয়ের ঈশ্বর’
পেশা, আবর্জনা সংগ্রহকারী ট্রাকের ড্রাইভার। পড়াশোনা থেমেছে স্কুলেই। বাকি আর পাঁচটা ট্রাক চালকের মতোই তিনিও সাধারণ ভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু একটা ঘটনায়ই সব পাল্টে দিল। ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে জীবন শুরু করলেও কলোম্বিয়ায় তিনি পরিচিত ‘বইয়ের ঈশ্বর’ নামে। আলবার্তো গুতিয়েরস, বয়েসে ষাট পেরিয়েছে। প্রবীণ মানুষটির আশ্চর্য নেশা গোটা বিশ্বে বই প্রেমীদের কাছে নজির সৃষ্টি করেছে।
১৯৯৭ সালের ঘটনা। ‘বোগোতা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ কোম্পনিতে ট্রাক ড্রাইভার হিসাবে কাজ করছেন গুতিয়েরস। রাতের শিফ্টে আবজর্না সংগ্রহ করতে বেড়িয়েছেন। শহরের এক অভিজাত এলাকায় আস্তাকুঁড় ময়লা তুলতে গিয়ে দেখতে পেলেন আবর্জনার মধ্যে পড়ে রয়েছে, তলস্তয়ের ‘আনা করেনিনা’। ছোট বেলা মায়ের বই পড়া শুনে বইয়ের নেশা ছিলই। আস্তাকুঁড়ে থেকে যত্ন করে তুলে নিলেন বইটি। সেই শুরু। তারপর যেখানে যে অবস্থায় বই কুড়িয়ে পেয়েছেন বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। ২৫ বছর ধরে গড়ে তুলেছেন এক বিরাট লাইব্রেরি। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে থাকা বইয়ের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও কিছু বেশি।
বই সংগ্রহ করেই থেমে থাকতে পারতেন। তবে গুতিয়েরসের স্বপ্ন ছিল আরও বড়। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর ইচ্ছে কলম্বিয়া দেশটাকে বইতে ভরিয়ে দেবেন। সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া কলম্বিয়ার একাধিক শহরের ৪৫০ টির বেশি লাইব্রেরিকে বই দান করেছেন তিনি। শিশুপাঠ্য থেকে শুরু করে সাইয়েন্স ফিকশন, ক্লাসিক সাহিত্যে কী নেই তাঁর সংগ্রহে। এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত আবর্জনা থেকে প্রায় ৫০ হাজার বই তিনি সংগ্রহ করেছেন এবং তা দান করেছেন। এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া প্রায় ৩০ হাজার কলম্বিয়ান নাগরিককে বই দিয়ে সাহায্য করেছেন গুতিয়েরস।
বর্তমানে গুতিয়েরস এবং তাঁর স্ত্রী রীতিমতো একটি সংস্থা তৈরি করে এই বই বন্টনের কাজটি করে থাকে। কলম্বিয়ার বিভিন্ন শহর থেকেও তাঁদের সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শুধু বই দানই নয়, কেউ বই দিতে চাইলেও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা দক্ষিণ কলোম্বিয়ায় এক দুর্গম অঞ্চলে প্লেনে করে বই পাঠিয়েছিল সংস্থা। বই সংগ্রহ এবং তা নিয়ে গুতিয়েরসের এই বিরাট কর্মকাণ্ডের জন্য কলোম্বিয়ায় তিনি ‘বইয়ের ঈশ্বর’ নামে পরিচিত।
Comments are closed.