বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন করতে আসা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের সঙ্গে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশী প্রাঙ্গণে যুদ্ধ হয় এবং তাতে পরাজিত হন নবাব। পলাশীর যুদ্ধের নবাবের হার এবং কম্পানি শাসকের জয়কে উদযাপন করতে শোভাবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নবকৃষ্ণ আজকের বাঙালির জাতীয় উৎসব অর্থাৎ শরৎকালীন দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন।
মহারাজা নবকৃষ্ণ প্রথম জীবনে ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুন্সি, তারপর হলেন সেসময় কলকাতা পত্তনের পূর্বে সুতানুটির তালুকদার। এরপর একে একে ওয়ারেন হেস্টিংসের মুন্সি, পরে ড্রেক সাহেবর মুন্সি ছিলেন। কম্পানি শাসকের অধিনস্ত কর্মচারী হওয়ার দরুন নবকৃষ্ণের সম্মান ও প্রতিপত্তি বেড়ে যায়।
এরপর ১৭৭৫ সালের পলাশীর ভূমিতে মীরজাফরের বেইমানির দৌলতে কম্পানির সেনাপতি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। নবাবের পরাজয়ে সবচেয়ে বেশি উল্লসিত এবং লাভবান হয়েছিলেন নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র অন্যদিকে কলকাতার মহারাজা নবকৃষ্ণ। এরপর লর্ড ক্লাইভের পরামর্শে পলাশীর যুদ্ধে কোম্পানির বিজয়-উৎসব উদযাপনের জন্য বসন্তকালীন দুর্গাপূজাকে পিছিয়ে আনা হয় শরৎকালে। পলাশী যুদ্ধের বছর বহু ধুমধাম করে শরৎকালীন দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থকে বজায় রাখতে মূর্তি পূজা বিরোধী লর্ড ক্লাইভ হিন্দু প্রেমিকদের সামনে ভালো সাজতে পুজোর সময় তিনি নবকৃষ্ণের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই পুজোয় কৃষ্ণচন্দ্র ও নবকৃষ্ণ উভয়ে মিলেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন।
ভারতীয় সশস্ত্র ও রীতি অনুযায়ী এদেশে বসন্তকালে দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল। কিন্তু কেবলমাত্র পলাশীর যুদ্ধে কোম্পানি শাসকদের বিজয়ানুষ্ঠান পালন করতেই বসন্তকালের পরিবর্তে শরৎকালের দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু হয়। আর সেই সময় থেকেই বাঙালি তাদের রীতিনীতিতে বহন করে চলেছে কম্পানি শাসকদের জয় উৎসব।
Comments are closed.