বয়েজ কয়্যারে মহিলা কণ্ঠে নিষেধাজ্ঞা, শিল্পের স্বাধীনতা নাকি লিঙ্গ সমতার অধিকার, দ্বিধাবিভক্ত জার্মানি

গলা পুরুষোচিত নয়, তাই বার্লিনের বিখ্যাত গায়কদলে জায়গা হল না ৯ বছরের খুদে গায়িকার। এমনকী আদালতও জানিয়ে দিল, গায়কদল যদি মহিলা কণ্ঠকে বিবেচনা না করে, তবে তা শিল্পের স্বাধীনতার অধিকার, সেই স্বাধীনতা তাদের থাকা উচিত। যা নিয়ে জার্মানিতে শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক।

ব্রেন্ডেনবার্গের শাসক দ্বিতীয় ফ্রেডরিক ১৪৬৫ সালে বার্লিন স্টেট অ্যান্ড ক্যাথিড্রাল কয়্যার প্রতিষ্ঠা করেন। ৫৫৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই গায়কদলে এপর্যন্ত কোনও গায়িকার জায়গা হয়নি । ‘বয়েজ কয়্যার’ নামে পরিচিত এই সমবেত সঙ্গীতের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে গত মার্চে অডিশন দিতে গিয়েছিল বছর নয়ের এক বালিকা। কিন্তু শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার জন্যই তাকে গায়কদলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বালিকার পক্ষে তার মা বার্লিনের একটি আদালতে অভিযোগ করেন, কয়্যারের এই আচরণ পক্ষপাতপূর্ণ। সরকারি সাহায্যে চলা এই প্রতিষ্ঠানের আচরণ সমানাধিকারের পরিপন্থী বলে মামলা করেন বালিকার মা। তাঁদের আরও অভিযোগ, ২০১৬ এবং ২০১৮ সালেও ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অডিশন না দিয়েই ফিরে আসতে হয় ছোট্ট মেয়েটিকে। বার্লিনের ইউনিভার্সিটি অফ আর্টসের সংগীত বিভাগের ডিন, যিনি সংশ্লিষ্ট গায়কদলের সঙ্গেও যুক্ত, একটি চিঠিতে জানান, ছেলেদের দলে একটি মেয়ে কখনওই গাইতে পারেন না। যদিও নাছোড় ওই বালিকা গত মার্চ মাসে ফের বার্লিনের স্টেট অ্যান্ড ক্যাথিড্রাল কয়্যারে পরীক্ষা দিতে যায়। এবার তাকে বলা হয় কয়্যারে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা বা প্রতিভা কোনওটাই তার নেই।
এই ইস্যু নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত জার্মানির সংস্কৃতিজগৎ। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সংগীতশাস্ত্র বনাম লিঙ্গ বৈষম্য, এই নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে জার্মানির বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে।
কয়্যারের সমর্থকরা মনে করেন, প্রাচীন এই সমবেত গানের দলের সঙ্গে মহিলা কণ্ঠ যোগ হলে ঐতিহ্য হারাবে ‘বয়েজ কোরাস’। তাঁদের দাবি, লিঙ্গ বৈষম্যের ধুয়ো তুলে ঐতিহ্য নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে পুরুষ কণ্ঠের জন্য ‘বয়েজ কোরাস’ অন্যদের চেয়ে আলাদা, সেখানে মহিলা কণ্ঠ যোগ হলে তা হবে বার্লিনের সংস্কৃতির পরিপন্থী। অন্যদিকে, আর একটি অংশ মনে করছেন, ৯ বছরের বালিকাকে কয়্যার থেকে বাদ দেওয়া মানে লিঙ্গ বৈষম্য আর পুরনো সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে থাকা, যা জার্মানিকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে।
যদিও বার্লিনের নিম্ন আদালত জানিয়েছে, ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য স্বতন্ত্র এই গায়কদল যদি মহিলা কণ্ঠকে বিবেচনা না করে, তবে তা শৈল্পিক অধিকার, সেই স্বাধীনতা তাদের থাকা উচিত। আর কয়্যারের দাবি, লিঙ্গ বৈষম্যের প্রশ্ন নয়, তারা যে পুরুষ কণ্ঠকে প্রাধান্য দেয়, ৯ বছরের গায়িকার তা নেই। যদিও এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার পথ খোলাই রেখেছেন বিচারক। সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন বালিকার মা-বাবা।

 

Comments are closed.