আমদানি করা বিলিতি পেঁয়াজে অনাস্থা রাজ্যগুলোর, বাধ্য হয়ে ক্রয়মূল্যের চেয়েও কম দামে বাংলাদেশকে পেঁয়াজ নিতে সাধছে ভারত

পেঁয়াজ নিয়ে মহা বিপাকে কেন্দ্র। বিলিতি পেঁয়াজের গুণমান খারাপ, এই অভিযোগে রাজ্যগুলো পেঁয়াজ কিনছে না। আর মুম্বই বন্দরের ডকে এসে নষ্ট হতে বসেছে লক্ষ লক্ষ টন বিলিতি পেঁয়াজ। অবস্থা সামালে এবার নিজের ক্ষতি করে কম দামে বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দিতে চায় ভারত।

নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। ১০০ পেরিয়ে কোনও কোনও জায়গায় পেঁয়াজ বিকিয়েছে প্রায় ২০০ টাকা কিলো দরে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে ভারত সরকার। চুক্তি হয় বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৩৬ হাজার টন পেঁয়াজ আনা হবে ভারতে। প্রথম কিস্তি হিসেবে ১২ জানুয়ারি বিলিতি পেঁয়াজ বোঝাই প্রথম জাহাজ ঢোকে মুম্বইয়ের ডকে। আসা মাত্রই প্রথম দফায় ৩ হাজার টন পেঁয়াজ কিনে নেয় রাজ্যগুলো। কিন্তু বিপত্তির শুরু সেখানেই।

মহারাষ্ট্র, অসম, হরিয়ানা, কর্ণাটক, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলো এই ৩ হাজার টন পেঁয়াজ নিজেদের দরকার মতো কিনে নেয় এবং তা বাজারে ছাড়তে থাকে। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ বিকোচ্ছে না। পরিস্থিতি এমনই যে বিক্রেতারাও বিলিতি পেঁয়াজ নিতে চাইছেন না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বিলিতি পেঁয়াজ দেখতে যেমন ভারতীয় পেঁয়াজের মত নয় তেমনই স্বাদেরও তারতম্য হচ্ছে। ফলে পেঁয়াজ বিকোচ্ছে না মোটেই। বাজারের এই অশনি সঙ্কেত পেয়ে সতর্ক হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলো। তারা নতুন করে বিলিতি পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে বিলিতি পেঁয়াজ বোঝাই জাহাজ সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে মুম্বই বন্দরের ডকে। পেঁয়াজ বেশিদিন টাটকা রাখা যায় না। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কোনও হিল্লে না হলে অন্তত ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে।

এর ফলে রাতের ঘুম উড়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকারের। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আমদানি করা পেঁয়াজ অন্য কোথাও সরবরাহ করার চেষ্টা চলতে থাকে। সোমবার এ নিয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। বাংলাদেশকে আবেদন করা হয় এই পেঁয়াজ কেনার জন্য। এমনকী এজন্য দামেও ছাড় দিতে যে মোদী সরকার রাজি, তাও জানিয়ে দেওয়া হয়।

সূত্রের খবর, বিদেশ থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার প্রতি মেট্রিক টন দাম দিয়ে যে পেঁয়াজ কিনেছে ভারত সরকার, সেই পেঁয়াজই বাংলাদেশকে ৫৫০ থেকে ৫৮০ ডলার প্রতি মেট্রিক টন দামে বিক্রি করে দিতে রাজি ভারত। তবে বাংলাদেশ তাতেও আগ্রহ দেখায়নি বলে জানা গিয়েছে।

দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট মাথাচাড়া দিতেই ভারতের পেঁয়াজ বিদেশে রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। তারপর ৪ দিনের ভারত সফরে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হালকাচ্ছলে বলেছিলেন, এভাবে রাতারাতি রফতানি বন্ধ করে কেউ! আমার বাবুর্চি আচমকা এসে বললে পেঁয়াজ নেই। বাধ্য হয়ে তাঁকে বলি, পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করো। হাজার হোক, আমরা প্রতিবেশি, সেটা যেন কেউ ভুলে না যায়, বলেছিলেন হাসিনা।

তারপর বাংলাদেশ অবশ্য চিন থেকে নেপাল হয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে দিয়েছে। সেই পেঁয়াজের একাধিক কিস্তি এসে পৌঁছে গিয়েছে ঢাকায়। ফলে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের যোগান এখন মোটের উপর স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে ভারত বাজার দরের চেয়েও কম দামে পেঁয়াজ দিতে চেয়েছে। ফলে এখন পেঁয়াজ নিয়ে নজর ঢাকার দিকে।

Comments are closed.