ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অছিলায় ভারতীয় সংস্কৃতিতে মার্কিনি হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরএসএসের মুখপত্রে, চিঠি কেন্দ্রকে

হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর এই প্রথম ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে নিয়ে ভারত সফরে আসছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। মোদী-ট্রাম্পের সুসম্পর্কের জেরে ভারত-মার্কিন দোস্তিতে এক নয়া যুগের সূচনা হতে চলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এরই মাঝে মার্কিন রাষ্ট্রপতির সফরের প্রাক্কালে তাল কাটল আরএসএসের সৌজন্যে।
বুধবার আরএসএসের মুখপত্র অর্গানাইজারে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। যেখানে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অছিলায় ভারতীয় সংস্কৃতিতে মার্কিনি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা হয়েছে সরাসরি। কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মার্কিন দূতাবাসের নাম ধরে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারত বিরোধী শক্তির মদতদাতা হিসেবে। ট্রাম্প-মেলানিয়ার ভারত সফরের প্রাক্কালে বিজেপির মতাদর্শগত অভিভাবক আরএসএসের মুখপত্রে এমন বিস্ফোরক প্রতিবেদনের কারণ কী?
বুধবার অর্গানাইজারের ওয়েব ডেস্ক US Consulate interferes in India’s internal matters in the guise of Film Festival – LRPF urges government to protect national interest and take necessary action শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনের নির্যাস, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই এবং দিল্লির ইউএস কনস্যুলেট জেনারেলের অফিস আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘চেঞ্জ চিত্র’ নামে একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের। অভিযোগ, ওই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ভারত বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত ‘ভিডিও ভলান্টিয়ার্স’ নামে একটি গোষ্ঠীর সহায়তায় ১৬ টি শর্ট ফিল্ম দেখানো হবে। এই শর্ট ফিল্মগুলো মুম্বই ও চেন্নাইয়ের ইউএস কনস্যুলেট অফিস, দিল্লির মার্কিন দূতাবাস সহ আরও কয়েকটি জায়গায় এবং কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের অডিটোরিয়ামে দেখানো হবে।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, লিগাল রাইটস প্রোটেকশন ফোরাম বা এলআরপিএফ আমেরিকার সঙ্গে ভারত বিরোধী অপশক্তির যোগসাজস ফাঁস করে দিয়েছে। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাহানায় বিশ্বের সামনে ভারত ও ভারতের জনগণকে অপদস্থ করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। বিদেশ মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ আরএসএস প্রভাবিত এলআরপিএফের।
অর্গানাইজারের প্রতিবেদনে দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে কখনও এনজিও আবার কখনও বাণিজ্যিক সংস্থাকে দিয়ে বারবার ভারতীয় সংস্কৃতিতে আঘাত হানার চেষ্টা চালিয়েছে। আগের সরকার সেই মার্কিন চাপের কাছে বারবার মাথানত করেছে, কিন্তু মোদী সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। ফিল্মের মধ্যে দিয়ে ভারত বিরোধীদের সুবিধে করে দেওয়ার প্রশ্নেও মোদী সরকার শক্ত পদক্ষেপ করবে বলে আশা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কিন্তু আরএসএসের মুখপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে কেন ভারত বিরোধী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে? উত্তর রয়েছে অর্গানাইজারের প্রতিবেদনেই। বলা হয়েছে, কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ভিডিও ভলান্টিয়ার্স নামে সংগঠনটির ওয়েবসাইটে কয়েকটি ব্লগ রয়েছে, যেখানে ৩৭০ প্রত্যাহার পরবর্তী কাশ্মীরের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। সেই ব্লগগুলোকে ভুয়ো বলে দাবি করে আরএসএসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দারিদ্র্য থেকে শুরু করে ভারতীয় নারী, কিংবা জাতপাতের প্রভেদ, সব কিছু নিয়েই মনগড়া কাহিনী ছড়িয়ে আসলে ভারতের ভাবমূর্তিকে বিশ্বস্তরে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় ভিডিও ভলান্টিয়ার্স। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পকে নিয়েও ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রতিবেদনে।
‘ভিডিও ভলান্টিয়ার্স’ নামে সংগঠনটি মূলত প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। ভারতের প্রান্তিক সমাজে মহিলাদের অবস্থা কিংবা রূপান্তরকামীদের দৈনন্দিন লড়াইয়ের কথা, অর্থাৎ প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ের কাহিনী ছড়িয়ে দেয় মানুষের মধ্যে। কিন্তু আরএসএসের দাবি, এই সংস্থা আসলে অ্যান্টি ন্যাশনাল।
আর ইউএস কনস্যুলেট যেহেতু এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজক, তাই আমেরিকাও ইচ্ছাকৃত ভারত বিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে আরএসএস প্রভাবিত এলআরপিএফ। চিঠিতে কেন্দ্রের তিন মন্ত্রককে তাদের পরামর্শ, ইউএস কনস্যুলেট জেনারেলের অফিসের তরফে ভারতের জনগণের উদ্দেশে এই ধরনের ভিডিওর এমন প্রকাশ্য সম্প্রচার ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বৈদেশিক শক্তির নাক গলানো হিসেবেই দেখা হোক। প্রতিবেদনে ভিডিও ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর জেসিকা মেবেরিরও সমালোচনা করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হবে কি হবে না, তা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফরের প্রাক্কালে বিজেপির মতাদর্শগত অভিভাবক আরএসএসের মুখপত্র অর্গানাইজারে এই প্রতিবেদন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

Comments are closed.